29 March 2018

দুগ্গাপুজো

ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।পুজো এলেই তখন
বুকের মধ্যে কেমন ধুকপুকানি বেড়ে যেত। পুজোটা কিভাবে কাটাবো, কি কি আনন্দ করবো ,কোন মজা বাদ যাতে না পড়ে। পুজোর চার দিন বেশ তাড়াতাড়ি কেটে যেত। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ,বেলায় বেলায়, শেষে এক একটা দিন চলে যেত ।সপ্তমীর দিন মনে হতো এইতো পুজো শুরু ,এখনও অষ্টমী আছে ,নবমী আছে। দু--দি--ন ।অষ্টমীও কেটে যেত ,তবু মনে হতো নবমী তো আছে , আরও একটা দিন, আরও অনেক কিছু ঘটবে, আরও আনন্দ। আশ্চর্যজনকভাবে নবমী ও কেটে যেত ।পরম বিস্ময়ে দেখতুম আর পুজোকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না, হাতের মুঠো আলগা হয়ে যাচ্ছে, পুজো শেষ হয়ে যাচ্ছে, শেষ হয়ে এল বলে ,শেষই হয়ে যাবে। চোখ ফেটে জল এসে যেত। তবু মনখারাপটাকে প্রশ্রয় দিতুম না। শেষবেলার ভাসান,শেষ পুজোটুকু, তারপরেও ঠাকুর  কোন কোন প্যান্ডেলে থাকত ঠিকই, কিন্তু আমাদের ন্যাড়া প্যান্ডেল, খালি বেদী,প্যান্ডেল থেকে ডেকোরেটরের লোকরা কাপড় খুলতে শুরু করেছে, ইলেকট্রিসিয়ানরা লাইট খুলে নিচ্ছে ;এসব দেখে সহ্য করতে পারতুম না। কষ্টর সেই বোধহয় প্রথম অনুভূতি--- পুজো শেষ।
কিন্তু শৈশবের সেই যে ষষ্ঠীর ভোরে হঠাৎ ঢাকের বাজনায় ঘুম ভেঙে যাওয়া আর মামাবাড়ির তক্তাপোষে শুয়ে প্রচন্ডতম বাস্তবকে মনে পড়া- আজ থেকে পুজো, সেই আনন্দটুকু আজ এই বয়সেও সেই একইরকম আছে। আমার এবং আমার মেয়েরও। ঢাকের শব্দে আমার ছোট্ট মেয়েটাও একই ভাবে পুলকিত হয়- দুগ্গাপুজো। সেও বুঝে গেছে, সেও তৈরি তার ছোট্ট শরীর মন দিয়ে সেই অজানা আনন্দ কে সারাজীবনের মতো আপন করে নিতে-এই তার শুরু ।আমার আর সেই পুজো নেই, অফিসে ছুটি নেই, বন্ধুদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই ,গোলাপি চুড়িদারের সেই মাতন নেই, সেই দিন চলে গেছে। নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছের ওপরে, পরিবার-বাবা-মা-মেয়ের জন্য এখন এই নবআনন্দের পুজো। সবাইকে আনন্দে রাখার একটা দায়িত্ব।কিন্তু আমার মেয়ের চোখে সেই ঠাকুর, সেই প্যান্ডেল আর সেই ঢাকের বাজনার আবেগ, আনন্দ আর আকর্ষণ দেখে পুরনো স্মৃতি কিছু কিছু বুঝে পাই ,ফিরে আসে যেন আমারই শৈশব। আমাদের সকলের দুগ্গাপুজো- এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম- সেই কালের যাত্রা।

No comments:

Post a Comment