কালে কালে বয়েস কম হল না।কেরীয়ারের লড়াই লড়তে লড়তে চোখে চালসে পড়ল।প্রেসারের ওষুধ ধরতে হল।চুল তো পাতলা কবেই হয়েছিল,এবার অল্প অল্প পাকও ধরল।গোঁফদাড়িও তথৈবচ।তবে বয়েস হলেও শখ যায়নি।চুরি করে মেয়ের চকোলেট আজও খাই।সুন্দরী মহিলা দেখলে চোরাচাউনিতে আজও চাই।তবে কিছু ব্যাথা আজও রয়ে গেছে।কিছু ভুল করে ফেলেছি,কিছু অভিমান।কিছু সময় চলে গেছে।কিছু মানুষ চলে গেছে।শেষ প্রেমিকা আমাকে ফেলে বাস থেকে নেমে গেছে,গলি ঘুঁজি খুজেও আর পাইনি। শেষ পরীক্ষায় পাশ করতে পারিনি,শেষ দেখা দেখতে পাইনি কাউকে কাউকে।কিছু আফশোষ রয়ে গেছে,কিছু দীর্ঘশ্বাস।আর অনেক না পাবার মধ্যে কিছু পাওয়াও রয়ে গেছে।স্ত্রীর আলতো হাতের যত্ন,মায়ের হাতের আমঝোল বা বাবার ধমক "ঝড় উঠেছে বুবাই,কোথাও বেরোবি না।” আর রয়ে গেছে ঘুমন্ত ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা।যেমন পার্ক স্ট্রীটের ফুটপাথে হাঁটতে গিয়ে এখনও খুঁজি টাটকা এসির গন্ধ,যেমন মামাবাড়ির কড়ী বরগা খড়খড়ী আর পঙ্খের কাজে খুঁজি ছোটবেলার স্মৃতি।তাই মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষই আসলে ভেতরে ভেতরে ভীষন একা।সন্ধ্যা নামলে পূর্ণীমা চাঁদের দিকে তাকালেই মনে হয় কোথায় যেন জেগে উঠছে আমার একাকীত্ব,আমার মনকেমন।কোথায় কি যেন ছিল,পাওয়া হয়নি।কোথায় কে যেন ছিল,দেখা হয়নি।শহুরে আলোর রোশনাই যেন জোর করে একাকীত্ব অস্বীকার করাতে চায়।তবু সিগারেটের ধোঁয়ার মত নিংড়ে বের হয়ে আসে কান্না।দেখা যায়না,বোঝা যায়না।এত বড় সংসারে কেউ কাঁধে হাত রেখে বা চোখে চোখ রেখে বুঝতে আসেনা কারও মনকেমন।হঠাৎ আকাশ কালো করে বর্ষা আসে,গাছের ডাল নুইয়ে পড়ে মাটি ছুঁতে চায়।দলা পাকিয়ে ওঠে দীর্ঘশ্বাস,চোখে জল এসে যায়।মনে হয় কেউ় কি বুঝলো আমাকে ঠিকঠাক,এ জগতে কেউ কি অনুভব করল আমার এই ছোট্ট আবেগ,ছোট্ট উপস্থিতি?গভীরে কোথাও রক্তাক্ত হই,অভিমান জেগে ওঠে,মনে হয় আমি কি কেউ নই?কিচ্ছু নই?কেন আমি এত একা শুধু আমার পাগল মনটাকে নিয়ে?কেন আমি এত ক্ষুদ্র,অসহায়?হঠাৎই রবিঠাকুরের গানের দুটো লাইন চোখের জলে ভিজিয়ে দেয়,বলে কি করলে জীবনে?“প্রহর হল শেষ”।
No comments:
Post a Comment