18 March 2018

কবির বিড়ম্বনা

একটা কবিতা লিখেছিলুম। অনেক ভরসা করে  মনোমতো সব ভালো ভালো  কথা দিয়ে  সাজিয়ে কবিতাটাকে দাঁড় করানো গেছিলো।অনেকবার পড়ে মনে  হলো, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এর চেয়ে ভালো লিখতে পারতেন না।গর্বে বুকের  পাটা দু ইঞ্চি বেড়ে গেল।অনেক আশা নিয়ে বাবাকে পড়ে শোনাতে গেলুম,বাবা পাত্তাই দিলেন না।বললেন ‘পড়াশোনার পালা চুকিয়ে ফেললে তাহলে!অবশ্য করেও লাভ হতো না কিছুই।তা এবার  কবিতা ফবিতা না লিখে একটা চাকরির চেষ্টা  করো।কবি হবে কবি।ফুঃ’। মনটা খারাপ হয়ে গেল।কবিতা লেখা পৃথিবীতে যেন ঘোর অন্যায়, কাজ ফাজ না থাকলেই বোধ হয় শুধু লোকে কবিতা লেখে।মনের দুঃখে খাতাটা বগলে চলে গেলুম হেবোর বাড়ি।হেবো দিনরাত হিন্দি গান শোনে,হিন্দি ফিল্মের ডায়ালগ ঝাড়ে। কবিতা টবিতা কি ব্যাটা বুঝবে?তবু একবার চেষ্টা করেই দেখা যাক।পড়ে শোনালাম পুরোটা।হেবো গম্ভীর ভাবে শুনলো সবটা।তারপর মুচকি হেসে বললো ‘সবই তো বুঝলাম গুরু, কিন্তু মেয়েটা কে?’ ‘তার মানে? এর মধ্যে মেয়ে এল কোত্থেকে?’আমি তো অবাক।‘ছুপানেকি কোশিস মত্ করো গুরু।লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছ, কবিতাও লিখছ আজকাল’।মানেখানা এমন, কবিতা লিখলেই বোধহয়  প্রেম করতে  হয়,  নাকি  প্রেম করলেই কবিতা লিখতে হয়।মাথা গরম হয়ে গেল।ওর কোন কথায় কান না দিয়ে,হাজারটা আরও ঠাট্টা হজম করে সোজা রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম।এসে দেখি বুধু নাপিত একা একা বসে আছে,কোনো খদ্দের নেই।এই মওকা।তাড়াতাড়ি ওর খাটো টুলে বসতেই ও সাবান গুলতে শুরু করে দিল।ওকে থামিয়ে বললাম ‘দাঁড়া,দাড়ি পরে কাটবি.আগে এটা শোন দেখি কেমন হয়েছে’?বলেই কবিতা পড়তে শুরু করে দিলাম কোনো প্রতিবাদ এর সুযোগ না দিয়ে।বুধু যদি এক মুহূর্ত ধৈর্য ধরে শুনে থাকে।একবার ঘাড় চুলকোচ্ছে,একবার ক্ষুর শানাচ্ছে তো একবার রাস্তার ওপারে কি হচ্ছে মাথা উঁচিয়ে দেখছে।বিরক্ত হয়ে একবার ধমক দিলাম অ্যায়সা।বাকিটা অবশ্য ঠিকঠাক শুনলো।শুনে বলল’ভালই হয়েছে,তবে শেষের দিকটা ঠিক যেন ইজি হয়নি।এবার তবে কামাই দাড়িটা’।যেন দাড়ি কামানোর জন্যই বসে ছিল এতক্ষন।শখের দাড়িটা বিসর্জন দিয়ে ,এক্সট্রা দুটাকা কবিতা শোনার ফি দিয়ে মুক্তি পাই অবশেষে।এবং বুধুও আমাকে সবিস্তারে বুঝিয়ে দেয় কবিতা সাইজ করা, চুল দাড়ি সাইজ করার মতোই সহজ এবং বেশ কিছু সাজেশনও সে  অক্লেশে বিলিয়ে দেয়।গা জ্বলে গেল শুনে,গালটাও জ্বলছিল।নেহাত হাতে ক্ষুর ছিল ব্যাটার ,নইলে---।কবিতার খাতাটার ওপরই রাগ হয়।তাল পাকিয়ে, কুচিয়ে তারপর রাগে লাথি মেরে উড়িয়ে দিই সেটাকে।তাতেও বিপদ।পাড়ার বিনোদবাবু জ্ঞান দিতে এলেন।‘এঃ,এভাবে পাড়াটাকে নোংরা করবেন না।এপাড়া তো আমার আপনার সক্কলের।এপাড়াতে যেমন.......’।বিনোদবাবুর উপদেশ শোনার সময় নেই।বাড়ি যাই।আর কোনদিন সাবানের ফেনার রামধনুতে স্বপ্ন দেখব না।

No comments:

Post a Comment