21 May 2021

অ্যালিবাই

দিব্যেন্দু ব্যানার্জি একজন মাঝারি মাপের ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ছিলেন। তার স্ত্রী শতরূপাকে নিয়ে তিনি শান্তিতেই ছিলেন। যদিও মিনমিনে প্রকৃতির মানুষ,কারো সঙ্গে বেশি মিশতেন না, কিন্তু সপ্তাহে একদিন ক্লাবে যেতেন বিলিয়ার্ড খেলতে। সেরকমই এক শীতের রাতে হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাত হল। শতরূপার মৃতদেহ পাওয়া গেল তারই রান্নাঘরে। ভারী কিছু দিয়ে বারবার আঘাত করে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। দিব্যেন্দুবাবু তখন বাড়িতে ছিলেন না, তার যথেষ্ট অ্যালিবাই ছিল। অনেকেই তাকে সে সময় ক্লাবে দেখেছি। ঘটনার আগের দিনই তিনি অফিস স্টাফেদের মাইনে দেওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা তুলে এনে নিজের কাছে রেখেছিলেন। রান্নাঘরে এক গোপন লকারে সেটা রাখা ছিল। সেই টাকাটাও লকার ভেঙে ডাকাতি হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কোন সূত্র পেল না। জানা গেল খুনটা হয়েছে সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা থেকে আটটার মধ্যে। আশেপাশের বাড়ি থেকেও কেউ কেউ কিছু বলতে পারল না। কেউ আততায়ীকে দেখেনি, কোন শব্দ বা চিৎকারও শোনেনি। পুলিশ ইন্সপেক্টর রাঘববাবু কোনরকম কূল-কিণারা না পেয়ে শেষে গোয়েন্দা সৌরনীলকে ফোন করলেন। সৌরনীল তদন্তে জানতে পারল, সেদিন সন্ধ্যায় দিব্যেন্দুবাবু ক্লাবে পৌঁছানোর আগে, দেবদত্ত সেন বলে একজন তার খোঁজে ফোন করেছিলেন। ওনার মোবাইলে পাচ্ছিলেন না, তাই ক্লাবের ফোনে ফোন করেছিলেন। একটা মেসেজ দিতে। দেশপ্রাণ শাসমল রোডের এক ঠিকানায়, যেন দিব্যেন্দুবাবু ব্যবসার জরুরী দরকারে, অবশ্যই ওনার সঙ্গে দেখা করেন। বিলিয়ার্ড রুমের ম্যানেজার দিব্যেন্দুবাবু আসতে সেটা জানিয়েও ছিলেন। দিব্যেন্দুবাবু অবাক হয়ে বলেছিলেন, 'দেবদত্ত সেন? এ আবার কে? চিনি না তো।' শতরূপাকে একা রেখে দিব্যেন্দুবাবু বাড়ি থেকে সচরাচর বের হতেন না। সেদিনও বেরোবার আগে তিনি বলেছিলেন, 'অপরিচিত কাউকে দরজা খুলো না, সাবধানে থেকো। পাড়ায় চুরি-ডাকাতি খুব হচ্ছে ক'দিন ধরে।' শতরূপা বলেছিল, 'হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে। তুমি নিশ্চিন্তে যাও।' দিব্যেন্দুবাবু ক্লাবে চলে গেলেন, সেখান থেকে কাছে বলে ওই ঠিকানাটা খুঁজতেও একবার বেরোলেন, কিন্তু খুঁজে পেলেন না। দিব্যেন্দুবাবু ফিরে এলেন। সৌরনীল ঘড়ি ধরে সব মিলিয়ে দেখল তার প্রতিটা কথা সত্যি। সুতরাং ওনার পরিস্কার অ্যালিবাই আছে। কিন্তু দেবদত্ত সেন সেজে দিব্যেন্দুবাবুই ফোনটা ক্লাবে করেননি তো? তারপর ঠিকানা খোঁজার নাম করে নিজের বাড়িতে ফিরে এসে শতরূপাকে...। সন্দেহটা গেল না। এরপরে শতরূপা হত্যা রহস্যের বাকিটুকু জানতে হলে টানটান উত্তেজনার গল্পটা পড়তেই হবে।

No comments:

Post a Comment