29 April 2018

টিফিনটাইম

স্কুলে টিফিন টাইমটা নানাভাবে কেটে যেত। গোল্লাচোর বা হাত টেনিস খেলে।টেনিস ব্যাট কোথা থেকে আসবে? হাতটাই ছিল ব্যাট।বল আসতো ব্যাগে করে। তবে গোল্লাচোরের মত সবাইকে নিয়ে খেলা আর ছিল না ।ফুটবলটা হতো গেমস পিরিয়ডেই, তাতে অবশ্য অনেকেই সেরকম পেরে উঠত না ।
মনে পড়ে স্কুলে,ক্লাসঘরে বসে বাইরে দেখা যেত সারি সারি নারকেল গাছ। হাওয়ায় তাদের দুলুনি দেখতে দেখতে পড়ানো কতবার ভুলে গেছি ,ওই দিকেই মন চলে গেছে ।পড়া ধরেছেন স্যার, বুঝতে পেরেছেন আমার অন্যমনস্কতার কথা । কিংবা মনে পড়ে পিরিয়ড শেষ হবার পর সেই সহজ চপলতা। বেঞ্চি ডিঙিয়ে দৌড়োদৌড়ি বা গল্পগুজব বা নানা রকম খেলা।টিফিন টাইমটাই ছিল সবচেয়ে অপেক্ষার বিষয়। পিরিয়ড গুলো পার হতেই ছুট লাগাতাম স্কুলের মাঠে বা প্রাইমারি সেকশন এর নিরিবিলিতে। সেখানে একদিন এরকমও হয়েছে তিন বন্ধু মিলে ঘুরতে ঘুরতে,মেন বিল্ডিংয়ের টিফিন শেষের ঘন্টা শুনতে পাইনি। ফিরতে ফিরতে পিরিয়ড শুরু, তারপর যথারীতি মার খাওয়া। তখনকার দিনে আজকের মত, ছাত্ররা মার খেলে বাবা-মা স্কুলে আন্দোলন করতে যেত না বা মিডিয়ার খবর হয়ে যেত না ।প্রায় প্রতিদিনই নানা কারণে নানারকম মার খাওয়াটা ছিল স্কুলের একটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা ।মার খেতে খেতেই আমাদের গোটা  ব্যাচটা মানুষ হয়েছে ,কোনো অসুবিধা হয়নি। অবশ্য কিছু মার খুব একটা নিরামিষ ছিলনা,যেমন ডাষ্টার ছুঁড়ে  মার বা আঙুলের ফাঁকে পেন্সিল ঢুকিয়ে মার।
টিফিন টাইমটা ছিল নানা রকম টিফিন ভাগ করে খাবার সময়। দুষ্টুমি, দাপাদাপি, মারপিটও হতো মাঝেমাঝে। যে যার মত সময়টা কাটাতাম। কেউ আবার বাড়ির টিফিন ফেলে দিয়ে, বন্ধুদের মুখরোচক টিফিনেই মহানন্দে ভাগ বসাত। আর ছিল স্কুলের গেটের বাইরে হাত বার করে পঁচিশ পয়সায় বাপীদার মিল্ক আইসক্রিম ,মনাদার কমলা রঙের আলুরদম বা ছুটকি ঝালমুড়িওলার কারেন্ট আচার ।
ছোটবেলায় টনসিলে ভুগতাম বলে আমার আইসক্রিম খাওয়া বারন ছিল।তাই স্কুলের টিফিনটাইমে তার শোধ তুলতাম।বাদামভাজা বা ঝালমুড়ি খাবার জন্য যে পঁচিশ পয়সা দেওয়া হত,তা দিয়ে মনের আশ মিটিয়ে আইসক্রিম খেতাম।অবশ্য বাপীদা আসেনি বলে বা মিল্ক আইসক্রিম শেষ হয়ে গেছে বলে অনেকদিন নিরাশ হয়েও ফিরতে হয়েছে।রঙীন আইসক্রিম বা কমলা রঙের লোভনীয় আলুরদম খেতে গিয়ে ,সাদা জামায় দাগ লাগিয়ে বাড়ি ফিরলে, পিটুনি খেতে হত ।তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেসব খাবার ত্যাগ করতে হয়েছিল।
আজ শুনতে অদ্ভুত লাগে পঁচিশ পয়সারও কত দাম ছিল তখন। বারো পয়সার বুড়ির মাথার পাকা চুল খাবার জন্য কত বায়না করতাম মার কাছে ,স্কুল থেকে ফেরত আসার সময়। আর ছিল গোলাপ রেউরি।এরোপ্লেন, প্রজাপতি এরকম কত রকম আকারে আর রঙে বানিয়ে কাঠিতে গুঁজে দিত। স্কুলের বাইরে এইসব ফেরিওয়ালারা টিফিন বা ছুটির সময়ে ঠিক চলে আসত।
 স্কুল লাইফটা খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেছে, আর আসবেও না জানি ।শুধু স্মৃতিগুলো ফিরে এলে মনটা ভালো হয়ে যায় ।এইটুকুই যা।

No comments:

Post a Comment