1 May 2018

ঘুষ

জীবনে ঘুষ খায়নি কখনো এমন সরকারি কর্মচারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ।ব্যতিক্রম ছিলেন আমার বাবা। রাইটার্সের বড়বাবু এবং শেষে গেজেটেড অফিসার আমার বাবা সৎভাবেই কর্মজীবনটা পার করেছেন ।নুন আনতে পান্তা ফুরিয়েছে, কিন্তু কিভাবে ঘুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন তার নানা কাহিনী শুনেছি ছোটবেলায় ।সেই সঙ্গে অধস্তনদের ঘুষ নিয়ে খেয়োখেয়ি আর হ্যাংলামির করুন বৃত্তান্ত ।আমার বাবার সেই সৎ ভাবমূর্তিটা আমার অভাবী ছোটবেলার একটা বল ছিল ,ভালোবাসা ছিল উৎসাহ ছিল। পকেটে স্ট্যাম্পপ্যাড নিয়ে নিজেই ছুটে বেড়াতেন লোকের ঘরে ঘরে আ্যটেস্টেড করার দাবিতে ।আমি তখন একটু বড়, বলতাম" তুমি কেন যাবে ওদের বাড়ি ,এরকম আবার হয় নাকি ?ওদেরই তো তোমার বাড়ি এসে করিয়ে নিয়ে যাবার কথা। দরকারটা তো ওদেরই।" বাবা হেসে বলতেন "না ,বেচারা যদি বাড়ি চিনতে না পারে" বা "ও পড়াশোনায় ব্যস্ত" ইত্যাদি দরদী অজুহাত।
যাই হোক শৈশব থেকেই জেনে ,না জেনে সততার একটা প্রথম পাঠ হয়ে গিয়েছিল ।কেউ বলে দেয়নি সৎ থাকতে হবে, শুধু একটা জেদ তৈরী হয়ে গিয়েছিল ।তাই আমার কর্ম জীবনে কনট্রাক্টরদের কত রকম প্রলোভন বা অলিখিত নিয়মে পা বাড়াইনি কখনো। পেছনে তাড়া করেছে তারা, এমনকি পাঁচ টাকার নোট নিয়েও, আর আমি মাথা উঁচু করে, গলা ছেড়ে নিজেকে, নিজের ঐতিহ্যকে প্রমাণ করে ছেড়েছি। সে এক অন্যরকম ভাল লাগা ছিল ,সে এক অন্যরকম অস্তিত্ব প্রমাণ করা ছিল ।
মনে আছে একদিন খাবার টেবিলে নিছকই মজা করে , মা যখন বলেছিল "বুবাই আজকাল তোর হাতে অনেক পয়সা টয়সা আসছে দেখছি, যা খুশি যেভাবে খুশি খরচা করছিস !কিভাবে আসছে রে এত পয়সা ?অফিসে ঘুষটুষ নিচ্ছিস না তো?" মুহূর্তে খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আমার। খাবার টেবিলে প্রতিবাদের সঙ্গে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম সারা জীবনের কান্না। সে কান্না ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার কঠিন সময়গুলোয় জেতার অভিমান, হৃদয়ের এক্কেবারে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা চরিত্রের প্রতিবাদ ।এতটাই পবিত্র ছিল সেই অস্তিত্বের প্রকাশ ।
সেদিন সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন আমার বাবা।

No comments:

Post a Comment