অনিলবাবুর বয়স হলো প্রায় ষাট বাষট্টি। একেবারে থুথ্থুড়ে বুড়ো হয়ে না পড়লেও, বয়সের ভারে তিনি অনেক নুয়ে পড়েছেন ।শরীর আর মনের নিস্পৃহতা ক্রমেই বাড়ছে। অনিলবাবুর আপন বলতে এখন আর কেউ নেই,বিশাল বাড়িটায় শুধু তিনি আর বাবার আমলের পুরোনো চাকর 'গৌর'। তার স্ত্রী গত হয়েছেন বছরখানেক হল। বড় ছেলে ইউকেতে চাকরি করে ,ফোনটোন করে নামকে ওয়াস্তে। আর মাসে মাসে হাজার দশেক টাকা পাঠায়।খরচ তেমন নেই ,চলে যায় একরকম।ভাড়াটেরা টাকা দিলে অবশ্য এই দানটুকুরও দরকার হত না। ছোট ছেলেটা বেকার হয়ে বসে আছে বছর তিনেক। রাতে আড্ডা মারা আর দিনরাত টো-টো করে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া ওর কোন কাজ নেই,ওকে বাড়িতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। বাবার কোন কথা মোটেই শোনে না , ছেলেটা বখে গেল বোধহয়। অনেক চেষ্টা করেছিলেন , কিন্তু এই প্রজন্মটাই অন্যরকম ।কি যে সব হচ্ছে। ওকে বোঝে শুধু বড় মেয়ে, এখন সেই ওর মা, সেই মেয়ে।শাশুড়ির মন ভিজিয়ে মাঝে মাঝে যখন আসে, তখন বাড়িটাতে যেন আলোর রোশনাই সেজে ওঠে। ওই অনিলবাবুর আশাভরসা। অনেক দেখেই বিয়েটা দিয়েছিলেন ,তবুও মানুষ বোঝে কার সাধ্য? স্বামীর বদলির চাকরি ,শ্বাশুড়ি খুব কর্তৃত্ব ফলাচ্ছে। কি আর করবে! কথায় কথায় স্ত্রীর কথা মনে পড়ে যায় ,তারপর ছোট মেয়ের কথা। তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক অধ্যায় হল এই দুজনের মৃত্যু ।আদর করে ছোট মেয়ের নাম রেখেছিলেন 'রাণী'। পাকা পাকা কথার ফুলঝুরিতে ও সবাইকে ব্যতিব্যস্ত করে মারত।সবাই খুব ভালোবাসত, কিন্তু ছোটবেলাতেই সুখের সংসার ছেড়ে ওকে চলে যেতে হয়েছিল ,কেড়ে নিয়েছিল সমাজের অঙ্গার সেই শ্রেণীটা। আগে সেদিনটার কথা মনে পড়লে শুধু রাগে-দুঃখে তিনি কাঁপতেন, এখন শুধু চোখ ফেটে জল বের হয়ে আসে ।
(গল্পটা পুরো পড়লে ভাল লাগবে)
(গল্পটা পুরো পড়লে ভাল লাগবে)
No comments:
Post a Comment