সেদিন অক্সফোর্ড বুক স্টোরে এক কান্ড।
এমনিতে আমার খুব একটা যাওয়া হয় না বটে, তবে কলকাতা এলে আমার পুরনো কলেজপাড়া পার্ক স্ট্রিটে একবার চরতে বেড়ানো চাই'ই, আর পার্কস্ট্রীট গেলে অক্সফোর্ড বুক স্টোরে যাব না! বই কিনি, না কিনি, একবার ঢুঁ না মেরে পারিনা।
তো সেদিনও যথারীতি ঢুকে পড়েছি, ঢোলা পাঞ্জাবি আর জিন্স পরে, আর নেড়েচেড়ে দেখছি বাংলা বইয়ের তাকগুলোয়। তখনই তার আবির্ভাব। বয়স কুড়ি বাইশের এক সুন্দরী ,সপ্রতিভ তরুণী ।পরনে জিন্স আর টপ, সাজ-পোশাকে আধুনিকা হলেও উগ্র নয় ।যাহোক সে দিকে খেয়াল ছিলো না খুব একটা, বই দেখতেই ছিলাম ব্যস্ত, যেরকমটা সচরাচর হয় আরকি।
কিন্তু সেলসম্যানের সঙ্গে তার কথোপকথনে আমার টনক নড়লো। সব কথা কান পেতে শুনতে লাগলুম উৎসুক হয়ে।
"এসব লেখা নয় ,আপনি অন্য কিছু দেখান না", বাংলা পরিষ্কার উচ্চারণ ।বুঝলাম নির্ভেজাল বাঙালি, ইংরেজী বা হিংরেজী মিশ্রিত বাংলা ব্যবহার করেনা, নব্য বংগালীদের মত, এই মেয়েটি। একটু সম্ভ্রম তাই আমারও চোখে, চোখাচোখি হল।
"না ম্যাডাম ,এই যা দেখছেন ,এই আছে আমাদের ।" "আরে ,নতুন লেখকদের লেখা নেই ?সব তো সুনীল আর শীর্ষেন্দু দেখাচ্ছেন।"
বুকটা ধড়াস করে উঠল, বলে কি মেয়েটা ? সুনীল শীর্ষেন্দু জয় সঞ্জীব বুদ্ধদেব ছেড়ে নতুন লেখক? এ কোন দেশি পাঠিকা! "না ম্যাডাম, এর চেয়ে নতুন লেখক আর নেই। নতুন স্টক এই টেবিলে দেখুন।" মেয়েটি তাতে বশ হয় না। "না ,না, এরা নয়, এদের সব লেখা পড়া। আমার নতুন লেখকদের বই চাই ,একদম আনকোরা।"
গলা শুকিয়ে আসে। লজ্জাবনত হয়ে, মনে মনে বলি, "হে আধুনিকা, তোমার সামনেই, এইতো দাড়িয়ে আছি, এক হতভাগ্য আনকোরা লেখক ।লেখা তো অনেকই লিখেছি ,বুকে ধরে লালনও করেছি, জীবন দিয়ে ,অনুভূতি দিয়ে, প্রাণ দিয়ে। কিন্তু হে অনুপমা, তোমার জন্য নেইতো আমার একটাও বই। কোন পাবলিশারই ছাপাতে রাজি হয়নি যে সেইসব ছাইপাঁশ। কি করি বলোতো, হে নব প্রজন্মের পাঠিকা, সুযোগটা হারালাম। তোমার জন্য নেই আমার মতো আনকোরা হাজার হাজার কবি-লেখকের বুকের গভীর কথায় সাজানো পরম অভীপ্সিত সেই বইখানি ,সেসব কথা বুকেই মরে যায় আজও ।ভাবালু বেদনাহত চোখে, মুগ্ধতায় তার চোখের দিকে তাকাই।সে আমাকে চিনতে পারে না।
সেলসম্যানের পরাজয়ে, সে এবার নিজেই ফোন লাগায় ,"হ্যাঁ দাদু ,কি বই নেব বলতো? সব তো তোমার পড়া। না ,নতুন লেখকদের কোন বই নেই এখানে। ও ,আচ্ছা ,দেখছি......."
তার বই খোঁজার শেষটুকু আর থাকতে পারি না, শেষ পর্যন্ত সে কি বই কিনে ,পরম আনন্দে বাড়ি ফিরবে, তা জানতেও ইচ্ছা করে না। দাদু-নাতনি মিলে কোন অনামী লেখকের সৌভাগ্যের কারণ হবে তা না জানাই থাক ।কিছু কিছু জিনিসের শেষ দেখতে নেই ,এই অনুসন্ধান যেন নিঃশেষ না হয়ে, চলতেই থাকে ।লেখকেরাও আশায় আশায় বেঁচে থাকে, এইসব পাঠক-পাঠিকাদের জন্যই ।এই যেমন আমি।
এমনিতে আমার খুব একটা যাওয়া হয় না বটে, তবে কলকাতা এলে আমার পুরনো কলেজপাড়া পার্ক স্ট্রিটে একবার চরতে বেড়ানো চাই'ই, আর পার্কস্ট্রীট গেলে অক্সফোর্ড বুক স্টোরে যাব না! বই কিনি, না কিনি, একবার ঢুঁ না মেরে পারিনা।
তো সেদিনও যথারীতি ঢুকে পড়েছি, ঢোলা পাঞ্জাবি আর জিন্স পরে, আর নেড়েচেড়ে দেখছি বাংলা বইয়ের তাকগুলোয়। তখনই তার আবির্ভাব। বয়স কুড়ি বাইশের এক সুন্দরী ,সপ্রতিভ তরুণী ।পরনে জিন্স আর টপ, সাজ-পোশাকে আধুনিকা হলেও উগ্র নয় ।যাহোক সে দিকে খেয়াল ছিলো না খুব একটা, বই দেখতেই ছিলাম ব্যস্ত, যেরকমটা সচরাচর হয় আরকি।
কিন্তু সেলসম্যানের সঙ্গে তার কথোপকথনে আমার টনক নড়লো। সব কথা কান পেতে শুনতে লাগলুম উৎসুক হয়ে।
"এসব লেখা নয় ,আপনি অন্য কিছু দেখান না", বাংলা পরিষ্কার উচ্চারণ ।বুঝলাম নির্ভেজাল বাঙালি, ইংরেজী বা হিংরেজী মিশ্রিত বাংলা ব্যবহার করেনা, নব্য বংগালীদের মত, এই মেয়েটি। একটু সম্ভ্রম তাই আমারও চোখে, চোখাচোখি হল।
"না ম্যাডাম ,এই যা দেখছেন ,এই আছে আমাদের ।" "আরে ,নতুন লেখকদের লেখা নেই ?সব তো সুনীল আর শীর্ষেন্দু দেখাচ্ছেন।"
বুকটা ধড়াস করে উঠল, বলে কি মেয়েটা ? সুনীল শীর্ষেন্দু জয় সঞ্জীব বুদ্ধদেব ছেড়ে নতুন লেখক? এ কোন দেশি পাঠিকা! "না ম্যাডাম, এর চেয়ে নতুন লেখক আর নেই। নতুন স্টক এই টেবিলে দেখুন।" মেয়েটি তাতে বশ হয় না। "না ,না, এরা নয়, এদের সব লেখা পড়া। আমার নতুন লেখকদের বই চাই ,একদম আনকোরা।"
গলা শুকিয়ে আসে। লজ্জাবনত হয়ে, মনে মনে বলি, "হে আধুনিকা, তোমার সামনেই, এইতো দাড়িয়ে আছি, এক হতভাগ্য আনকোরা লেখক ।লেখা তো অনেকই লিখেছি ,বুকে ধরে লালনও করেছি, জীবন দিয়ে ,অনুভূতি দিয়ে, প্রাণ দিয়ে। কিন্তু হে অনুপমা, তোমার জন্য নেইতো আমার একটাও বই। কোন পাবলিশারই ছাপাতে রাজি হয়নি যে সেইসব ছাইপাঁশ। কি করি বলোতো, হে নব প্রজন্মের পাঠিকা, সুযোগটা হারালাম। তোমার জন্য নেই আমার মতো আনকোরা হাজার হাজার কবি-লেখকের বুকের গভীর কথায় সাজানো পরম অভীপ্সিত সেই বইখানি ,সেসব কথা বুকেই মরে যায় আজও ।ভাবালু বেদনাহত চোখে, মুগ্ধতায় তার চোখের দিকে তাকাই।সে আমাকে চিনতে পারে না।
সেলসম্যানের পরাজয়ে, সে এবার নিজেই ফোন লাগায় ,"হ্যাঁ দাদু ,কি বই নেব বলতো? সব তো তোমার পড়া। না ,নতুন লেখকদের কোন বই নেই এখানে। ও ,আচ্ছা ,দেখছি......."
তার বই খোঁজার শেষটুকু আর থাকতে পারি না, শেষ পর্যন্ত সে কি বই কিনে ,পরম আনন্দে বাড়ি ফিরবে, তা জানতেও ইচ্ছা করে না। দাদু-নাতনি মিলে কোন অনামী লেখকের সৌভাগ্যের কারণ হবে তা না জানাই থাক ।কিছু কিছু জিনিসের শেষ দেখতে নেই ,এই অনুসন্ধান যেন নিঃশেষ না হয়ে, চলতেই থাকে ।লেখকেরাও আশায় আশায় বেঁচে থাকে, এইসব পাঠক-পাঠিকাদের জন্যই ।এই যেমন আমি।
No comments:
Post a Comment