আমি আবেগ ও অনুভূতিপ্রবণ,ভাবুক আর সৃষ্টিশীল।জীবনের চলা,ওঠাপড়া আর অভিজ্ঞতা নিংড়োনো এই সব লেখা ।এ আমার পাগল মনের নিঃশেষিত প্রকাশ।
2 August 2020
লাল অ্যাম্বাসডরের রহস্য
শোভন বেশ সাদাসিধা ছেলে,বছর ত্রিশ-পয়ত্রিশ বয়স, কামারহাটি এলাকায় টোটো চালায়।বাড়িতে ওর বয়স্ক বাবা মা রয়েছেন, খুবই কষ্টেসৃষ্টে সংসার চলে।বাবা সামান্য একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করতেন, শেষদিকে তারা মাইনেপত্রও ঠিকঠাক দিত না । তারপর তো একদিন লক আউটই হয়ে গেল বাবার কারখানাটায়। আর বিশেষ কিছু বকেয়াও বাবা পাননি। চাকরিটা গেল, তারপর এখানে ওখানে নানা ধান্দা, নানা ব্যবসার চেষ্টায়, বাবা বেশ কিছু টাকা বাজে খরচ করে ফেলেছিলেন। তাই এখন ওদের এইরকম অবস্থা। সব জমানো টাকা শেষ, মায়ের গয়নাগুলো পর্যন্ত । শোভন কিন্তু পড়াশোনাতে চিরকালই ভাল ছিল, গ্রাজুয়েশনও করেছিল কমার্স নিয়ে। কিন্তু আর বেশি দূর পড়তে পারল না, সংসারের হাল ধরতে হল। এই কষ্ট, এই অভাব আর ও চোখে দেখতে পারছিল না। শেষ যেটুকু জমানো টাকা ছিল, সব দিয়ে একটা টোটো কিনে রাস্তায় নামাল। এখন ওই সংসারের হাল ধরেছে, একটু একটু করে গোছাবার চেষ্টা করছে সব। নেশা ভাং,খারাপ অভ্যাস কিছুই ওর নেই,সৎ পথে থেকে,আপ্রাণ খেটে যেটুকু রোজকার হয়। কিন্তু কয়েক মাস হল, ওর একটা অদ্ভুত সমস্যা হচ্ছে ।কিছুদিন হল , প্রায়ই ভোরের দিকে ও একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছে , কদিন পরপরই। প্রতিবারই স্বপ্নটা কিন্তু একই আর সেটা খুবই অদ্ভুত। ওর নাকি একটা লাল অ্যাম্বাসডর গাড়ি আছে । কোথায় আছে, ও নিজেই ভাল করে জানে না, খবরও রাখে না। অযত্নে পড়ে আছে গাড়িটা।এমন কি গাড়িটাকে সেখান থেকে নিয়ে আসারও ওর কোন গরজ নেই। অথচ গাড়িটা বেশ সুন্দর, ভাল অবস্থাতেই আছে। এই স্বপ্নটাই বারবার দেখে শোভন,ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।
শ্যামলদার সঙ্গে টোটোস্ট্যান্ডে গল্প করার সময়, মাঝে মাঝেই স্বপ্নটার কথা বলে শোভন, ‘জান শ্যামলদা, আজ না আবার ওই একই স্বপ্নটা দেখলাম।‘ ‘আমাদের মনে যা গোপন ইচ্ছা থাকে, তাই আমরা স্বপ্নে দেখি। তুই এতবার স্বপ্ন দেখিস, তো একটা পুরোনো অ্যাম্বাসডর কিনে ফেলিস না কেন লোনে? সেকেন্হ্যান্ডের দাম তো আর বেশি নয়।‘ ‘সেসব জানি গো, কিন্তু স্বপ্নটার কোন একটা মানে নিশ্চয়ই আছে।’ ভাড়া নিয়ে শ্যামলদা চলে যায়। শোভন ভাবতে থাকে, ভাবতেই থাকে।
ক’দিন পরে আবারও স্বপ্নটা দেখল শোভন। এবার কিন্তু স্বপ্নের মধ্যে, লাল অ্যাম্বাসডরের সঙ্গে একটা দোকানের নামও দেখে। গাড়িটা ‘হোটেল নিরিবিলি’ বলে একটা দোকানের সামনে দাঁড় করানো রয়েছে। সাইন বোর্ডে পরিস্কার লেখা নামটা, নীচে লেখা রানিগঞ্জ। স্বপ্নটা ওখানেই ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে এবার একটু চিন্তায় পড়ে যায় ও, হোটেল নিরিবিলি কি রানিগঞ্জে সত্যিই রয়েছে? এতটা স্পষ্ট তবে ও স্বপ্নে দেখল কি করে! এর মানেটাই বা কি? সারাদিন অন্যমনস্কভাবে ও স্বপ্নটার কথাই ভাবতে লাগল। সেদিন দুপুরে শ্যামলদাকে বলতে, শ্যামলদা বলল, ‘রানিগঞ্জ? সে তো কয়লাখনি অঞ্চল। গেছিস নাকি ওখানে কখনও?’ ‘না গো,কস্মিনকালেও নয়। তবে আমার এক খুড়তুতো দাদা দুর্গাপুরে থাকে।‘ ‘কখনো যাসনি? তাহলে সেখানে ঐ ধাবাটার নাম তুই জানলি কি করে?’ ‘কি করে বলব?স্বপ্নে দেখলাম যে।‘ ‘হুঁ, কিন্তু বারবার এই স্বপ্নটাই দেখছিস কেন,সেটা জানা সত্যিই দরকার। যা না, একবার ঘুরেই আয় না ওখান থেকে। ওখানে তোর কিছু একটা হিল্লে হয়ে গেলেও যেতে পারে।‘
শোভন ঠিক করে ফেলল, ও যাবেই।এমন কিছু তো নয়,মাত্র চার-পাঁচ ঘন্টার রাস্তা। এভাবে আর পেরে ওঠা যাচ্ছে না। ওকে জানতেই হবে এই স্বপ্নের মানেটা কি , আর এর শেষই বা কোথায় ।এভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে না, এই স্বপ্ন আর ক’বার দেখলে ও নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবে। কেন? কেন? কেন? নানা প্রশ্ন ভিড় করতে থাকে ওর মাথার মধ্যে,ও উত্তর খুঁজে পায়না। এক রহস্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ওকে, ও উপেক্ষা করতে পারে না। যা হোক, অনেকদিন তো কোথায় যাওয়া হয় না,রানিগঞ্জই সই।শেষমেষ একদিন ট্রেনে চেপে বসল শোভন, কিছু টাকা হাতে নিয়ে। কে জানে,ক’দিন থাকতে হয় ওখানে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment