14 October 2019

কুসুম ফোটেনি

-নহরপুলের কাছে কি হয়েছে শুনেছিস?
-না তো! কি হয়েছে?
-রেপ হয়েছে রেপ,যা দেখে আয়।কত ফটো তুলবি,তুলে আয়।
-সে কি রে? তুই কি করে জানলি?
-আরে, মেয়েটাকে জঞ্জালের মধ্যে পড়ে থাকতে, আমিই তো প্রথম  দেখেছি,সেই সকালে।
-পুলিশে জানাস নি?
-ধুর!আমার কি! মরুক গে।
                   সত্যিই তাই। কারও কিছু না। বিক্রম শহরের কাছে, সেদিন ভোরে যখন ময়লা, ছেঁড়া জামাকাপড় পরা,বছর বারো তেরোর মেয়েটাকে জঞ্জালের গাদার মধ্যে দেখা গিয়েছিল, ভিড় জমে গিয়েছিল। কোথা থেকে এল মেয়েটা ,কিই বা হয়েছিল ওর? সবাই তো প্রথমে ভেবেছিল মেয়েটা বোধহয় মরেই গেছে। পরে দেখা যায় বেঁচে আছে, অল্প নড়ছে চড়ছে। সারা শরীরে অত্যাচারের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু হেলদোল হয়নি এলাকার বাসিন্দাদের। কোথাকার মেয়ে,কে তুলে নিয়ে গিয়ে রেপ করে ফেলে গেছে,কে জানে? পাশেই জিটি রোড, সারারাত ট্রাক যাবার কমতি নেই।চারিদিকে তো এরকম কত ঘটনার কথা শোনা যায়, কে কার খবর রাখে !রোগা-পাতলা অপুষ্ট শরীরের মেয়েটা কাতরাচ্ছে।আসলে মেয়ে তো,খেতে না পাক, ভগবানের দেওয়া শরীর আছে না! নিজে খাবার হতে বাধা কোথায়? চারপাশে এত লোলুপ দৃষ্টি। হায়রে, অভাগা দেশ। নিজের ঘরে বসে এই কথাগুলোই ভাবছিলেন চন্দ্রভূষণ, এলাকায় শিক্ষক হিসেবে তার খুব সুনাম আছে। চন্দ্রমাস্টার আর ভাবলেন না ,এভাবে চুপচাপ বসে সব দেখা যায়না। নিজের বন্ধু ও প্রতিবেশী সুদীপকে নিয়ে চলে গেলেন ভ্যাটের কাছে।
‘কি হল বল তো, কি করতে চাইছিস তুই ?’ সুদীপের গলায় বিস্ময় ।
-কি করব বুঝতে পারছিনা। কিন্তু এ তো চোখে দেখা যায় না। মেয়েটা মনে হচ্ছে বেঁচে আছে।
-সে তো দেখেছি। কিন্তু থানা-পুলিশের ঝামেলায় জড়াস না রে চন্দ্র। ফেঁসে যাব। রেপ কেস।
-তা বললে হয়! মেয়েটাকে এভাবে পড়ে পড়ে মরে যেতে দেব ?
-কি করবি তবে?
-চল, বলছি।
                  দুজনে গিয়ে হাজির হলেন জঞ্জালের স্তুপে। তখনও দর্শকসংখ্যা নেহাত কম নয়। মুখরোচক আলোচনা চলছে, ঘৃণায় তাদের দিকে একটা জ্বলন্ত দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে, পাশের চায়ের দোকান থেকে বোতলে করে একটু জল নিয়ে এলেন চন্দ্র। তারপর মেয়েটার পাশে বসে একটু একটু করে মুখে চোখে জলের ঝাপটা দিতে লাগলেন। ওর নিজের মেয়েও তো প্রায় এই বয়সীই, এমনি যদি ওর নিজের মেয়েটার হত? মেয়েটার কপালে হাত রাখলেন চন্দ্র, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে, সারা শরীরে যন্ত্রণার ছাপ। জল দিতেই একটু যেন নড়ে চড়ে উঠল মেয়েটা। চন্দ্র বললেন,‘এই মেয়ে, তোর নাম কি? তোর কি হয়েছে?উঠে বসতে পারবি?’
                মেয়েটা গোঙানির মত একটু শব্দ করল। তারপর অস্ফুটে বলে উঠলো ‘পানি, পানি’। চন্দ্রমাস্টার মেয়েটার মাথাটা পরম মমতায় নিজের কোলে তুলে নিলেন ।ততক্ষণে আর একটা জলের বোতল নিয়ে এসেছে সুদীপ। সেই বোতল থেকে একটু একটু করে জল ঢেলে দিতে লাগলেন মেয়েটার ঠোঁটের ফাঁকে, তখনও সেখানে রক্ত শুকিয়ে রয়েছে। মেয়েটা অতিকষ্টে একটু ঠোঁট ফাঁক করে অল্প জল খেল, তারপর আবার যন্ত্রনায় কঁকিয়ে কেঁদে উঠল,  চোখের কোন দিয়ে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল,রক্ত-ধুলো-ময়লার মধ্যেই।
                ‘কোথায় যন্ত্রণা রে তোর মেয়ে?’, বলতেমেয়েটা নিজের নিম্নাঙ্গের দিকে একটা হাত অল্প তুলে দেখাল। লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গেল চন্দ্র-সুদীপের, সব বুঝতে পারলেন।হঠাৎ মেয়েটা কেঁদে উঠল ‘আম্মা, আম্মা’ করে, তারপর আবার বেহুঁশ হয়ে গেল।আস্তে আস্তে ওরা মেয়েটাকে আবার ওখানেই শুইয়ে দিলেন, চারপাশে ভ্যাটের দুর্গন্ধ।কিন্তু কি করা যাবে? চারপাশের মানুষগুলো তখন একটু তফাতে। ওদেরও কি লোলুপ দৃষ্টি,যেন চোখ দিয়ে খাচ্ছে সব।পারলে ওরাও ছিঁড়েখুঁড়ে খেত মেয়েটাকে। পারেনি, সুযোগ পায়নি বলে। মেয়েটার যে এই দশা করেছে,সেই নরপিশাচটার থেকে,আলাদা কিছু নয়। ঘৃণাভ’রে ওদের দেখে,চন্দ্রমাস্টার উঠে পড়লেন। ‘চল রে সুদীপ, থানায় যেতে হবে। একটা এফআইআর করা দরকার।‘
                (বাকিটা জানতে গল্পটা পুরো পড়তে হবে)

No comments:

Post a Comment