2 March 2020

ক্ষতিপূরণ

(১) ‘কি গো মহিনদা, কোথায় চললে এই ভরদুপুরে?’ ‘এই একটু বেরোলাম আরকি।‘ হেসে বিগলিত হয়ে উত্তর দেয় মহীন্দ্র। নাইট ডিউটি করে ফিরে যার এখন ঘুমোনোর কথা। ‘তা বেরোও, তবে ওই শ্যামলবাবুর কাছে হত্যে দিয়ে তোমার লাভ হবে না কিছু।‘ রামচাঁদ ব্যঙ্গ করে। ‘কি করে জানলি কিছু হবে না? উনি আমায় কথা দিয়েছেন।‘ ‘দুর। ছাড় ওনার কথা। সকাল-বিকেল পঞ্চাশজন লোককে উনি ওরকম কথা দেন।চাকরি হয় কারো?’ ‘হবে না কেন? আমার ছেলেটা কি ফেলনা নাকি?’ ‘না গো মহিনদা। ফেলনা হতে যাবে কেন? তবে বলছিলাম কি, তোমার ছেলের মত মেট্রিক পাশ তো কত ছেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।দেখে যাও, কারো চাকরি করে দিতে পারেনি তোমাদের ওই ইউনিয়নের নেতা,খালি মুখে বুকনি ।‘ ‘তুই থামবি? আমাকে যেতে দে।‘ ‘যাও যাও, টাকাগুলো জলে যাবে, এই সাবধান করে দিলাম কিন্তু। আমাদের কথা তো শুনবে না, মরুক গে যাক।‘ মহীন্দ্র আর কথা না বাড়িয়ে সাইকেলে উঠে প্যাডেল করতে শুরু করে।নাইট ডিউটির ক্লান্তি ওকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু উপায় নেই, আর কদিন পরেই রিটায়ারমেন্ট। ছেলেটার পিছনে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে, তবু না হয়েছে পড়াশোনা, না চাকরি।প্রচুর খরচা হলেও, মেয়েদুটোর অবশ্যি বিয়ে দিয়ে দিয়েছে ভালোই। বড় জামাইয়ের ডাম্পার চলে দু’দুখানা ,আর ছোটজন স্কুল মাস্টার। কিন্তু একমাত্র ছেলেটারই কিছু হল না ,ব্যবসাটাও তো ঝুলে গেল। ওদিকে অনেক টাকা পিএফ লোন বকেয়া রয়েছে,বাজারেও ধার। রিটায়ারমেন্টের পরে লাখতিরিশের বেশি কেটেকুটে পাবে না। ওই টাকায় কি করে তিনজনের পেট চলবে, কে জানে ? তারপর কোয়ার্টারও ছেড়ে দিতে হবে, বাড়ি ভাড়া কম করে চারহাজার টাকা মাসে। দুশ্চিন্তায় ঘুম হয়না মহীন্দ্রের। ছেলেটা বদসঙ্গে পড়ে গেল, মদ- জুয়া-আড্ডা-মারামারি কিছুই বাকি নেই,এইসবই করে বেড়ায় সারাদিন। বাড়িতে থাকেই বা কতক্ষণ। হাতে-পায়ে ধরেছিল শ্যামলবাবুর। ইউনিয়নে ওনার কথাই শেষ কথা, কেউ ঘাঁটায় না ওনাকে। খতরনাক লোক, এক কথাতেই ছেলেটার চাকরি হয়ে যেতে পারে কন্ট্রাকটারের আন্ডারে। শুধু যে টাকাটা চেয়েছেন,সেটা দেবে কি করে মহীন্দ্র?ব্যাঙ্কে যা পড়ে আছে, সব দিয়েও যদি হয়।আজ সে কথাই বলতে যাচ্ছে ভরদুপুরে নেতার কাছে। এই সময় উনি খেতে আসেন বাড়িতে, যদি দশ মিনিট সময় দেন। ‘কিরে মহিন,এনেছিস নাকি?’ ‘না শ্যামলদা,মানে ---’ ‘আনিসনি তো আবার এসেছিস কেন?তোকে তো সেদিনই বলে দিলাম।‘ ‘সে তো বলেছেন,কিন্তু আমি বলছিলাম---’ ‘আর কিছু বলতে হবে না রে, এখন যা ।আমার চান খাবার সময় হল।‘ ‘শ্যামলদা ,একটা কথা শুনুন। আমি টাকা দিয়ে দেব। এই মাসেই তো রিটায়ার করব,তখনই নয় বাকি --’হাত জোড় করে বলে মহীন্দ্র। ‘থাম, থাম। গোটা রাজ্যের লোক এডভান্স দিয়ে সিট বুক করছে, আর উনি বলছেন পরে দেবেন। যা তো, অনেক ক্যান্ডিডেট আছে ।আগে টাকা তারপর কাজ।‘ ‘শ্যামলদা, অতগুলো টাকা জোগাড় করতে পারিনি ।যদি অর্ধেক দিলে----’ অনুনয় করে মহীন্দ্র। ‘তুই যাবি? বলেছিনা, পুরো টাকা চাই। কোন ছাড়াছাড়ি নেই। চাকরি যেন হাতের মোয়া !ফোট এখন।‘ নেতা উঠে পড়েন। দরজার আড়ালে তার নাদুস নুদুস শরীরটা হারিয়ে যেতে দেখে মহীন্দ্র। দরজা বন্ধ হয়ে যায় ওর মুখের উপর। বিরস বদনে ফিরতে হয় মহীন্দ্রকে। ছেলেটার চাকরিটা না হলেই নয় ।রিটায়ার করে গেলে আর কেউ পুছবে না, যা করার এই ক’দিনেই করতে হবে। (২) ‘কিরে বিক্রম, আজ বাড়ি চললি যে এত আগেই! মুড নেই নাকি?’ ‘না দোস্ত ,আসলে একটা কাজ আছে।‘ ‘আরে ছোড় তোর কাজ। আর দু’দান খেলে যা না। এবার সিওর জিতবি।‘ ‘না রে দিলদার ,বাপটা শালা এ মাসের শেষেই রিটায়ার করে যাবে ।তারপর সেই টাকায় বড় গেম খেলব।যত ধারবাকি আছে সব তখন শোধ করে দেব। বাকি টাকা দিয়ে একটা দোকান দেব ভাবছি। সেই ব্যাপারেই যেতে হবে রে ।‘ ‘আরে বাঃ। কিসের দোকান দিবি গুরু। চুল্লুর?’ ‘চুপ কর তো।এখন ফালতু ইয়ার্কি ভাল লাগে না।‘ ‘আরে না না গুরু।চটছিস কেন?বলছিলাম কি নিজের প্ল্যান্টে একটা হিল্লে করে দিতে পারল না তোর বাপ? এতদিন চাকরি করল আর এটুকু পারল না?’ ‘ধুর ,আমার বাপের অত দম থাকলে তো হয়েই যেত।‘ ‘তাই তো দেখছি। আবার দেখ কত লোকের চাকরি হয়েও যাচ্ছে।‘ ‘কার আবার চাকরি হল রে?’ ‘এই তো নকুলদার। দু’মাস হল, বাপমরা কেসে জয়েন করেছে প্ল্যান্টে।‘ ‘তাই নাকি? জানি না তো!কিন্তু ওর বাপটা তো কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছিল ।‘ ‘তুই কিস্যু জানিস না। অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছিল জিটি রোডে, কিন্তু ডেডবডি পাওয়া গেল প্ল্যান্টের ভেতর।‘ ‘মানে? সেটা কি করে সম্ভব?’ ‘সব সম্ভব গুরু।রাতের বেলায় কত বডি কোথায় কোথায় পাচার হয়ে যাচ্ছে ,আর এ তো লোকাল কেস। পয়সা দিলে কি না হয়! বাপের ডেডবডি রাতারাতি প্ল্যান্টের ভেতর রাস্তার ধারে ফেলে রেখে গেল।‘ ‘তারপর? ডিউটির মধ্যে অ্যাক্সিডেন্ট বলে দেখিয়ে দিল?’ ‘আর নয় তো কি? তারপর ইউনিয়নের ঝামেলা, গোটা মিলে প্রোডাকশন বন্ধ।এমডি ছুটে এল। রাতারাতি নকুলদার চাকরি হয়ে গেল, বড় ছেলে বলে কথা।‘ ‘হুঁ,বুঝলাম। যাই রে ।‘ ‘যাচ্ছিস?যা।মন খারাপ করিস না।‘ বিক্রম বাড়ির পথে হাঁটা দিল,বড় অন্যমনস্ক আজ।মাথাটা আগুন হয়ে আছে । এমনও হয়? ও তো এসব জানতই না, কখনো ভাবেওনি। ডেডবডি নিয়ে চাকরি পাবার ষড়যন্ত্র! আর ভাবতে পারেনা বিক্রম। (৩) ‘কি মহিনদা ,আজও রাতপালি?’ ‘হ্যাঁ রে চেঞ্জ করলাম। কাজ ছিল।‘ ‘আর তো কালকের দিনটা। তারপরেই তো তোমার ছুটি। রিটায়ারমেন্টের পর বহুৎ ফুর্তি করবে না গো?’ ‘ফুর্তি কি বলছিস রে অমিত! ক’টাকাই বা পাব? সব তো দেনা শুধতেই চলে যাবে।‘ ‘সে কি গো! সবাইতো গাড়ি-বাড়ি হাঁকাচ্ছে রিটায়ার করে, কত দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে ।আর তোমার এই দশা কেন?’ ‘আর বলিস না রে। মেয়ে দুটোর ভাল ঘরে বিয়ে দিতেই সব জমানো টাকা চলে গেল।তার ওপরেও কত ধার হয়ে গেল।ওদিকে ছেলেটা আবার ব্যবসা করবে বলে কত টাকা উড়িয়ে দিল। কি করব বল।‘ ‘তোমার ছেলেটা কি করে বলতো মহিনদা ?’ ‘কিচ্ছু করে না রে ,শুধু নেশা আর বদসঙ্গে টাকাগুলো উড়িয়ে দিল।‘ ‘চাকরি বা ব্যবসা কিছু করে দিতে পারলে না?’ ‘চেষ্টা তো অনেক করেছিলাম রে। ব্যবসার জন্য দু’দুবার টাকা দিলাম পিএফ থেকে তুলে। হতভাগা সব টাকাগুলো জলে দিল ।এখন আবার ওষুধের দোকান করবে বলে দু’লাখ টাকা চাইছে। ওই সব টাকাগুলো শেষ করবে রে অমিত।‘ ‘নাঃ, তোমার কপালটা সত্যিই খারাপ দেখছি।দিনকাল কিন্তু ভাল নয়,নিজের বাকি জীবনটার জন্য কিছু টাকা হাতে রেখো,সব এভাবে শূন্য করে দিও না।‘ ‘সবই তো বুঝি রে,কিন্তু বাপ তো।ছেলেটার কিছু ব্যাবস্থা তো করতে হবে।’ ‘দেখ না,বড় সাহেবকে বলে ছেলেটার জন্য চাকরি বাকরি কিছু জোটাতে পার কিনা।‘ ‘বলেছিলাম তো কতবার। ওর স্বভাব চরিত্র জেনে গেছে এখন সবাই ।আর কেউ নিতে চায় না।তাছাড়া পড়ালেখাও তো বেশিদূর করল না। কন্ট্রাক্টরের আন্ডারেও এখন তো কত গ্রাজুয়েট ছেলে লেবার খাটছে, আর ও তো শুধু মেট্রিক পাশ ।‘ ‘ তা যা বলেছ।‘ মহীন্দ্র গার্ড দিতে চলে যায় গুদাম ঘরের দিকে। সারারাত জাগতে হবে। এত কষ্ট করেও ওর মনে কোন শান্তি নেই। কাল চাকরির শেষ দিন, তারপরেই শেষ চেক পেয়ে যাবে। কিন্তু কি করে চলবে বাকি জীবনটা? ওই ক’টা টাকা তো ছেলেটাই লুটে নেবে, তারপর তাড়িয়ে না দেয় বুড়োবুড়িকে। দুশ্চিন্তায় আজকাল সব সময় অন্যমনস্ক থাকে মহীন্দ্র ।ছেলেটা আজকাল কেমন যেন রেগেমেগে তাকায় ওর দিকে, যেন গিলে খেয়ে ফেলবে ।রিটায়ারমেন্টের শেষ টাকাগুলোর জন্য ওর খুব লোভ, বোঝে মহীন্দ্র।কিন্তু কিই বা করবে,ছেলেকে যে বড্ড ভালবাসে ও। ওর অন্ধস্নেহেই যে ছেলেটা গোল্লায় গেছে, আজকাল বুঝতে পারে মহীন্দ্র,কিন্তু এখন বড় দেরী হয়ে গেছে। টাকাগুলো ফিক্সড করে দিলে বা এলআইসির পেনশন স্কিমে দিয়ে দিলে ,এমআইএস পেত ।ক’দিন খেয়ে পরে বাঁচত। কিন্তু তা কি হতে দেবে রাক্ষসটা? শাসিয়ে রেখেছে ,ওষুধের দোকানের জন্য দু’লাখ টাকা ওর চাই’ই। কিন্তু মহীন্দ্র জানে ,ওষুধের দোকান না ছাই। সব সাট্টা-জুয়ার পেছনে উড়িয়ে দেবে বজ্জাতটা। ওরও মার্কেটে অনেক দেনা হয়েছে,পাওনাদারেরা প্রায়ই আসে বাড়িতে,হুমকি দিয়ে যায়। তাই বাপের টাকার দিকে ওর এত লোভ।তবু যদি এই টাকাটায় ছেলেটার কিছু ভাল হয়,একটু শুধরোয়,এই আশায় আশায় মরে মহীন্দ্র। (৪) ‘এ কোথায় নিয়ে এলি রে লাল্টু, ভয় করছে।‘ ‘ভয় করলে হবে, দোস্ত? কাম সারতে হবে না।‘ ‘শেষে ফেঁসে যাব না তো! লোক জানাজানি হয়ে গেলে?’ ‘ তার কোন চান্স নেই ,দোস্ত । হারুদার কাজ একদম পরিষ্কার। নো রিস্ক ।‘ ‘থানা পুলিশ হলে শেষে ---’ ‘এবার কিন্তু বড্ড ফালতু বকছিস। তাহলে এলি কেন আমার টাইম বরবাদ করে ?এত কষ্টে হারুদার ডেরায় আসার গ্রিন সিগনাল পেলাম, আর লাস্ট মোমেন্টে ঝোলাচ্ছিস?’ ‘আরে রাগ করছিস কেন লাল্টু? একটু ভয় করছে আসলে। ফার্স্ট টাইম তো ।‘ ‘ সুপারি দিতে এসেছিস, অত ভয় পেলে চলবে? কাজ হাসিল হয়ে গেলে তিরিশ হাজার টাকার চাকরিটা তোর বাঁধা ,সেটা দেখ।‘ ‘সেইজন্যই তো এলাম।এখানে দিতে হবে বলে বাবার অ্যাকাউন্টের এটিএম কার্ড থেকে পিন জেনে বেশ কিছু টাকা তুলে নিয়েছি, আজ সকালেই।‘ ‘কি করেছিস রে। শালা বাবার টাকাতেই বাবার সুপারি। তোর এলেম আছে বলতে হবে ।‘ বলতে বলতেই, ঝুপড়ি ঘরের দরজায় হাজির হয় দুজনে। ‘হারুদা হারুদা’ বলে চাপা গলায় দু’বার ডাকল লাল্টু। কিছুক্ষণ পরে দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে গেল, বিস্রস্ত কাপড়চোপড় সামলে একটা কমবয়সী মেয়ে উঁকি দিল ।‘কাকে চাই?’ ‘আমি লাল্টু। হারুদা আসতে বলেছিল।‘ ঘরের ভেতর থেকে কে যেন কিছু বলে উঠল, মেয়েটা দরজা খুলে দিল। দুজনে ঘরে ঢুকে দেখে মদের আসর বসেছিল।কিন্তু ডিল করার সময় হারুন মদ খায় না। গেলাসের বাকি মদটুকু এক ঢোঁকে গলায় ঢেলে দিয়ে হারুন ইশারা করল মেয়েটাকে ।মেয়েটা সব সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বিছানাতেই দুজনের বসার জায়গা করে দিল। ‘বল এবার কার সুপারি?’ লাল চোখে হারুন জানতে চায়। ‘ওর বাবার ।নাম মহীন্দ্র দাস।‘ লাল্টু আমতা আমতা করে বলে। ‘বাবার!’ হারুন অবাক হয় ।ওর মত ভাড়াটে খুনিও এ কথায় একটু চমকে উঠল। লাল্টু পুরো প্ল্যানটা হারুদাকে বোঝাযতে শুরু করে ।বিক্রম মাথা নীচু করে বসে থাকে,গলা শুকিয়ে এসেছে ওর, কাজটা ঠিক করছে তো ? বাবাকে মারবে চাকরির শেষ দিনে ,নিজের চাকরি পাকা করতে? ‘নাঃ, এছাড়া আর কোন উপায় নেই। আজই রাতে লাস্ট চান্স। মাস গেলে কড়কড়ে তিরিশ হাজার টাকা মাইনে। ছাড়া যায়?’,বিক্রম ভাবে। হারুন চোখটা ছোট করে ,ভুরু কুঁচকে তাকায় বিক্রমের দিকে ।ওর খুনি মনও কেমন যেন অবিশ্বাসের চোখে মেপে দেখতে চায় আপাত ভদ্র ছেলেটার মন। ‘কি দিনকাল পড়ল রে বাবা। ছেলে বাবাকে, বউ বরকে,প্রেমিক-প্রেমিকাকে সুপারি দিয়ে খুন করাচ্ছে। সবাই শালা সাধুপুরুষ ।শুধু যত পাপী এই আমার মত সুপারিকিলাররা?’বলে হো হো করে হেসে ওঠে হারুন। যাইহোক টাকা পেলেই হল, কে কাকে মারছে তাতে ওর কি? তবে কাজটা একটু কঠিন। লোকটাকে মারতে হবে প্ল্যান্টের ভিতর। বাকি অঙ্কটা পরিষ্কার হয়ে যায় হারুনের কাছে। ভালো দাঁও মারতে হবে। ‘না না ,বিশ হাজারে হবে না।প্ল্যান্টে ঢুকে মারতে অনেক হ্যাপা, সিকিউরিটি আছে গেটে।পঞ্চাশ হাজার লাগবে।‘ তিনজনে দরাদরি, অনুনয়-বিনয় চলতে থাকে। ওদিকে তখন মহীন্দ্র বাড়িতে বসে রিটায়ারমেন্টের ফাইল গোছাতে ব্যস্ত। ভাবতে থাকে আজ নাইট ডিউটিটাই শেষ চাকরি। কাল সকাল দশটায় ঠিক কত টাকার চেক পাবে হিসেব করতে থাকে। ছেলেটাকে দু’লাখ দিলে আর কত পড়ে থাকবে? তাতে তিনজনের পেট চলবে তো ?মাসে খরচ কিছু কমাতে হবে, একটা ছোটখাটো লোকাল কমিটির নাইট গার্ডের চাকরি ধরবে নাকি? দু’পয়সা তো আসবে তাতে। (৫) পরদিন ভোরবেলা রামচাঁদ ছুটতে ছুটতে আসে মহীন্দ্রর বাড়ি,এ কি কথা শুনছে! বাড়ি তখন ভিড়ে উপছে পড়ছে, সবাই জানতে চাইছে কি হয়েছিল মহীন্দ্রর। কেউ বলতে পারছে না, বাড়িতে তখন কেউই প্রায় নেই।জটলার মধ্যে নানা লোক নানা কথা বলতে থাকে।কোনটা সত্যি,কোনটা মিথ্যে কে জানে?ওদিকে বেলার দিকে, লোকাল নিউজ চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেখাতে থাকে। “ কর্মজীবনের শেষ দিনে খুন হলেন মহীন্দ্র দাস নামে প্ল্যান্টের এক রক্ষী। এদিন তিনি নাইট ডিউটি করছিলেন অফিস ও গোডাউনে। হঠাৎ অন্য সহকর্মীরা গুলির শব্দ পান, দেখা যায় গেটের কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন মহীন্দ্রবাবু। এরিয়া সূত্রে জানা গেছে এদিনই অবসর নেওয়ার কথা ছিল মহীন্দ্রবাবুর। সকাল ছ’টায় পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে এলে সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন।দেহ আটকে রেখে ছেলের চাকরি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে তারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। মিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।শেষে সকাল দশটায় সব দাবী মেনে নেওয়া হলে, তবে বিক্ষোভ থামে। এই ঘটনায় সেন্টার কর্মী আবাসনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ।সেখানে গিয়ে দেখা যায় পড়শীরা ভিড় করে এসেছেন মহীন্দ্র বাবুর বাড়ি । এক পড়শী ও সহকর্মী অমিত চ্যাটার্জী বলেন, মহীনবাবু খুব সাদাসিধা মানুষ ছিলেন,পাড়াতে বা কারখানাতে ওর কোন শত্রু ছিল না।তাকে কেন খুন করা হল, কেউ বলতে পারেননি। কারখানার তরফে থানায় পুরো বিষয়টি তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে। পুলিশ কমিশনার বলেন, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাথার ডান দিকে গুলি বিঁধেছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে, তদন্ত চলছে ।কারখানার এমডি সুনীল তিওয়ারি জানিয়েছেন মৃত কর্মচারীর ছেলেকে চাকরি ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।“

No comments:

Post a Comment