23 June 2019

কখনও বলিস না

(আত্মহত্যাপ্রবণ কিশোর কিশোরীদের উদ্দেশ্যে লেখা)
         'চলে যাচ্ছি' বললেই হল নাকি? আরো কত দিন পড়ে আছে,কত মানুষ তোর মুখ চেয়ে আছে,  তাদের কি উত্তর দিবি ?'চলে যাচ্ছি' বললেই বা কে তোকে যেতে দিচ্ছে ?কেন চলে যেতে চাইছিস, থাক না আরো কটা দিন এই প্রিয় পৃথিবীতে।যেমন থেকে যাচ্ছে ছোট্ট পিঁপড়ে,লড়াকু পরিযায়ী পাখি বা জঙ্গলের পর জঙ্গল শেষ হয়ে গেলেও হাতিদের দলে আপ্রাণ থেকে যাচ্ছে ছোট্ট বাচ্চাটা। সেইরকমই থেকে যা না,আরও কটা দিন।
          প্লিজ ,এত তাড়াতাড়ি চলে যাস না। না হয়  থাকলই কিছু দোষের,কিছু ভুলের,কিছু না পাওয়ার।আরও কত কিছু তো করার আছে,কত কিছু দেখার আছে,কত কিছু জানার আছে। স্পেনের আলতামিরা  বা প্রিয় মানুষটার সাথে বাইকে লন্ডন যাত্রা না হয় ছেড়েই দিলাম ।এই যে এখন আকাশে বর্ষার মেঘ করেছে ,টুপটাপ বৃষ্টি হচ্ছে,আর বাইরে নিম গাছটার সবুজ সবুজ পাতার গা দিয়ে জলের ফোঁটাগুলো যেন একের পর এক মুক্তোর মত গড়িয়ে পড়ছে ,এসব কি সত্যিই দেখবি না তুই? এসব তো তোরই জন্য । শীতের শুরুতে আকাশটা যখন ঝকঝকে নীল হয়ে যায় আর মিঠে রোদে মনটা ভাল হয়ে যায়, যখন  রাস্তার ধারে একটা সদ্যোজাত ছাগল ছানা অকারণে তিড়িংবিড়িং  লাফায়  বা চরম অবজ্ঞায় নর্দমার কোণেও যখন সবুজ চারাগাছটা মেলে দেয় তার দৃপ্ত দুটো পাতা ,তখন মনে হয় বেঁচে থাকা কি সুন্দর।এই সুন্দর জীবন কি তোর জন্য নয় ?এসব কি আমাকে একা একাই দেখে যেতে হবে ? কতদিন ,আর কতদিন এভাবে 'চলে যাচ্ছি ' বলে চলে যাবি ?
           কিছুতেই তোকে চলে যেতে দেব না। তোরই জন্য যে এই খরার দেশে ,আজও কষ্টেসৃষ্টে সন্ধ্যেবেলায় জুঁইফুল ফোটে, গন্ধ ছড়ায়।তুই দেখবি না হাতে তুলে নিয়ে? সেই গন্ধ বুকে টেনে নিবি না ?তোরই জন্য পৃথিবীর কোন দূর যুদ্ধপ্রান্তে, কোন গরীব ঘরে অভুক্ত মা তার মুখের গ্রাস তুলে দেয় সন্তানের মুখে,তুই তা জানবি না? ভুল বুঝে চলে যাবি?ওরে,তোকে যে ভালবাসি আমরা,এ কথা কি বলে দিতে হবে?তুই কি বুঝতে পারিস না? মানুষে মানুষে এত হানাহানি, তবু সন্তানকে ,ভাইকে ,প্রিয় বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে যে ভালোবাসা আর সারা জীবন পাশে থাকার যে না বলা কথা, চোখের একফোঁটা জল হয়ে অজান্তে নামে, তুই তা বুঝবি না? কিসের এত রাগ,দুঃখ, অভিমান ?
           এই যে বইয়ের মধ্যে থাকা শুকনো গোলাপ, কবেকার জমানো ট্রামের টিকিট, রাশিরাশি নিউজপ্রিন্টে শুধু তোরই কথা ,একলা দুপুরে স্বপ্নে সেই সব মন কেমন করা রাস্তা, ঠাকুমার পুরোনো বাক্স খুলে বেরিয়ে আসা ময়লা হয়ে যাওয়া ঠাকুরদার শেষ চিঠি, একা একা ছাদে বসে পূর্ণিমা রাতে সেই যে প্রথম কবিতা মনে আসা, আলমারি খুলে বাসি বেনারসির মধ্যে টাটকা চেনা গন্ধ, ঘেমো ভীড় বাসের হয়রানিতে হঠাৎ কানে এসে পড়া মান্না দের সেই গান বা  হঠাৎ খুঁজে পাওয়া রবিঠাকুরের  ছিন্নপত্র এগুলো কি কিছুই নয় রে? এসব তবে কার জন্য ?নাইবা হল সব পাওয়া,এই ছোট ছোট জিনিসগুলোই তো সব, এই ভালবাসার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাস না।প্লিজ,যাস না।

No comments:

Post a Comment