"ওরা ঘিরে ফেলেছে চারদিক থেকে,এখনই পালাতে হবে।" হাঁফাতে হাঁফাতে ঘরের ভেতর ঢুকে এই কটা কথাই বলতে পারল নীলাদ্রি।অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠল বৈশালী আর ওদের আদরের ছেলে তোতোন ।তোতোন এবার ক্লাস ফোরে উঠেছে ,ওকে ঘিরেই নীলাদ্রি আর বৈশালীর যত স্বপ্ন ।একটু একটু করে, কষ্ট করে টাকা জমাচ্ছে ওরা। জুটমিলে কাজ ক'রে কটাই বা মাত্র টাকা! তার ওপর আবার ইউনিয়নের হপ্তা আর পরেশদার সুদের টাকার হ্যাপা ।কি করে যে সংসার চলে তা শুধু ওরাই জানে।নীলাদ্রি বলত, এবার একটা বড় চাকরি হবে ।কে যেন চেনা আছে, বলেছে ঢুকিয়ে দেবে। মাইনে নাকি ডবল্। স্বপ্ন দেখে ওরা, অনেক অনেক স্বপ্ন ভেসে বেড়ায় ওদের চোখে। নীলাদ্রির কোন বাজে নেশা নেই,শুধু তোতোনকে ঘিরে আশা ভরসা। পড়াশোনায় খারাপ নয় তোতোন , একটা টিচার দেবে ভেবেছিল এবারে।নতুন একটা ঘরও নেবার আছে। কিন্তু তার আগেই এ কি অঘটন ঘটে গেল !
যে বস্তিটায় ওরা থাকে, তাতে কোন ঝুটঝামেলা ছিল না; ছিল শুধু আত্মীয়তা, ভালোবাসা আর মমতার বাঁধন ।কিন্তু হঠাৎই কিছু বহিরাগত বাজে লোকজন এসে জুটতে লাগল কোথা থেকে এসে। তারপরেই শুরু হলো পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া, মেয়েদের দিকে কুনজর, কুকথা, ধর্ম নিয়ে উগ্রতা, চোখরাঙানি, মারামারি। তবু চুপ করে ছিল ওরা, দাঁতে দাঁত চিপে সব সহ্য করে যেত। জানত একটু প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হলেই ওদের বস্তিতে আগুন জ্বলবে। অনেকদিন থেকেই প্রোমোটারের নজর এই জমিটার দিকে ।চারপাশে দারুন দারুন রাস্তাঘাট, ফ্ল্যাট, মল। মাঝে যেন বেমানান এই বস্তিটা।
কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। জলের কল নিয়ে দখলদারি,রাস্তা আটকে দোকান, মদ আর দেহব্যবসার আমদানি,চুরিচামারি এসব ওরা বাধ্য হয়ে সহ্য করত, কিন্তু মাত্র চার বছরের বাচ্চা মেয়েটার ওপর পাশবিক নির্যাতন মেনে নিতে পারলনা বস্তির কেউই। একজোট হয়ে সকলে সেই বহিরাগত দলটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল। যার হাতে যা আছে, তাই নিয়ে ওদের সম্মিলিত প্রতিরোধে পালাল সমাজবিরোধীগুলো ।কিন্তু বঁটি-দা-লাঠি-সোঁটা কি পারে সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধীদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের সামনে? ফলে যা হবার তাই হল। ওরা দ্বিগুন সংখ্যায় ফিরে এল, ঘিরে ফেলতে লাগল বস্তিবাসীকে। বস্তিবাসীরা তো মাত্র শ'তিনেক ,অস্তিত্ব রক্ষায় তারাও বেরিয়ে এল লড়বে বলে ।কিন্তু লড়ব বললেই কি আর লড়া যায়? সমাজবিরোধীরা অনেক শক্তিশালী, তাদের পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক মদত,চলছে ঘৃণ্য চক্রান্ত।বস্তিবাসীদের মাথার ওপর থেকে আশ্রয়ের হাতগুলো ধীরে ধীরে সরে যেতে লাগল। প্রতিবাদ প্রতিরোধ সব পথ হারাতে লাগল,ভাঙতে লাগল ওদের একতা।নিজেদের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল স্বার্থের বিষাক্ত ছোবল।
(এরপর কি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল?জানতে গেলে পড়তে হবে পুরো গল্পটা)

No comments:
Post a Comment