
সকালবেলা দাঁত মাজতে মাজতে ছাতে উঠেছিলুম। এই সময় বেশ ফুরফুরে হাওয়া দেয়। গলির ওপারে কাকলিদের বাড়ির ছাতে কাকলিকেও দেখা যায়। দাঁত মাজতে মাজতে সে সবই দেখছিলুম। হঠাৎ একটা ক্যাম্বিস বল এসে ধপ্ করে মাথায় পড়ল। চারপাশে খুঁজেও কাউকে দেখতে পেলুম না। এই সাতসকালে কে আবার সখ করে ক্রিকেট খেলছে!তবে বলটা হাতে নিয়ে বেশ পছন্দ হল। বিকেলে উঠোনে বেশ লাথানো যাবে,ফোকোটে পাওয়া যখন। ভেবে বলটা নিয়ে নামতে যাব , হঠাৎ কোথ্থকে কে যেন বলে উঠল "বেওয়ারিশ ভেবে মালটা চুপচাপ ঝেড়ে দিচ্ছ গুরু "। অবাক হয়ে চারপাশে খুঁজেও কাউকে দেখতে পেলুম না। বিলুটা করছেনা তো ?কিন্তু বিলুদের ছাদে কেউ নেই। রাকেশদের বাড়ি আরও দূরে। কিছুতেই কিছু মাথায় ঢুকল না। কে বলল তাহলে?হঠাৎ জলের ট্যঙ্কের তলা থেকে গুঁড়ি মেরে ময়লা জামাকাপড় পরা বড় বড় চুলওলা একটা রোগাপটকা লোক বেরিয়ে এল। এসেই হ্যা হ্যা করে দাঁত বের করে এমন হাসতে লাগল যে পিত্তি জ্বলে যেতে বাধ্য। খুব রাগ হল। সাতসকালে এ ব্যাটা ছাদে এল কিকরে?নিশ্চই রাতে চুরির মতলবে এসেছিল। বাবাকে কথাটা বলতে যাব কিনা ভাবছি,হঠাৎ লোকটাই বলে উঠল “ ছি ছি,চুরি করা মহাপাপ। ওসব করা কি আমার সাজে!চেহারাটা অবশ্য চোরের মত হয়ে গেছে,কিন্তু বংশের ইজ্জতের সওয়াল আছে তো।" বলে ঘাড় বেঁকিয়ে হাসতে লাগল আর আমাকে নিরীক্ষণ করতে লাগল। “কি বংশ?”প্রশ্ন করতে যাব, হঠাৎ এবারও টেলিপ্যাথিতে লোকটা মনের কথা জেনে ফেলে বলল “রায়বাহাদুর বিজয়কিশোরের বংশের একমাত্র বংশধর আমি গোলোককিশোর সিংহ”। বলে হাতের একটা কালচে মত দাগ না জড়ুল কি একটা দেখাল। সাতসকালে এমন পাগলের উৎপাত সহ্য হল না। বললাম “এখানে কি করছ তবে?সকালবেলা ?” লোকটা গম্ভীরভাবে বলল“এজ্ঞে হাওয়া খাচ্ছি”। “তো আমাদের ছাদে কেন?এটা কি হাওয়া খাবার জায়গা?”আমার রাগত প্রশ্ন । লোকটা খুব বিরক্ত হল কথাটা শুনে। তারপর ব্যাডমিন্টন-এর একটা ভাঙা র্যাকেট কুড়িয়ে নিয়ে কোমরে গুঁজে পাঁচিল টপকে পাইপ বেয়ে নামতে লাগল। একবার শুধু মাথাটা তুলে বলল “গুরু,তুমি আমাকে ছাদ দেখাচ্ছ?আমাদের যা ছাদ ছিল,তাতে তোমাদের মতো দশটা ছাদ ধরে যেত।সব ছাদের মায়া আমি ত্যাগ করেছি। ” তারপর কি মনে পড়ে যেতে আবার একটু উঠে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল “তোমার আমায় সকলের ছাদ তো ওই একটাই। সকালে যার রঙ লাল,দুপুরে আকাশি আর রাতে কাল। কটা ছাদ নেবে তুমি?”বলে কি সব বলতে বলতে নামতে লাগল। খুব রেগেমেগে কি সব গালাগালিও বোধহয় দিতে লাগল। কটা কথা কানে এল। “..… ছাদের জমিদারি পেয়েছে। ওর বাপের ছাদ?ছাদ সবার। সববার ছাদ। শা * ..…। ”বলতে বলতে নেমে গেল পাগলটা। আর কোনওদিন দেখিনি তাকে। কিন্তু ওর শেষ কথাগুলো এখনো ভুলতে পারিনি ..… আজ এই বিশ বছর পরেও।
No comments:
Post a Comment