গাছদাদুকে অবাক হয়ে দেখছি।একটা গাছের ডাল কোথ্থেকে কুড়িয়ে নিয়ে ঘুরছেন।না, ভয় পাবার কোনো কারণ নেই,মানুষের ওপর ওনার কোন রাগ নেই।তোমরা হয়তো ওনাকে দেখে ছিটগ্রস্থ ভাববে।আমরা জানি ,উনি গাছ পাগল লোক। রাস্তার আনাচে কানাচে সময় ও সুবিধা পেলেই ওই রিটায়ার্ড ভদ্রলোক গাছ পুঁতে চলেন। ওই ওনার ধ্যানজ্ঞান। তবে লাঠি কেন? অরে একি একটা প্রশ্ন হল ?গাছের পরম শত্রু হল গরু। মুখরোচক খাদ্যতালিকায় গরুরা সাধারণত অতি যত্নে ও অতি কষ্টে পোঁতা দামী কচি গাছকেই স্থান দেয়। গাছ দেখলেই হলো ,মুড়িয়ে একেবারে ন্যাড়া করে দেবে।দাদুর কত সাধনা যে এই করে বিফলে গিয়েছে।তাই ওনাকে রোজ সকালে আর বিকেলে দেখবে লাঠি হাতে।ভর দেবার নয়,গরু তাড়াবার লাঠি।দাদুরা এমনিই হন বোধহয় ।কোনো একটা কিছু মাথায় চাপলে আর যাবার নয় ।তার যত্নেই জায়গাটা এখন ভরে গেছে ,সবুজে ভরে গেছে মাঠ। বুক ভরে গেছে নির্মল বাতাস আর বাঁধভাঙা আনন্দে।এছাড়াও দাদুর নানা গুণ আছে।আজব আজব এক্সপেরিমেন্ট করতে ওনার জুড়ি নেই। মশার ওপর লঙ্কার গুঁড়ো ছড়ানো,তেলের সঙ্গে জলের মিশ খাওয়াতে পাতিলেবুর রস ও তেজপাতার ব্যবহার ইত্যাদি ওনার মহান কীর্তি।যদিও তিনি প্রায়ই দুঃখ করে বলেন তার বৈপ্লবিক আবিষ্কারগুলোর কেউ মূল্য বুঝল না।বয়ঃজ্যেষ্ঠ দের আসরে অবশ্য দাদুর খুবই প্রতিপত্তি এবং তার আবিষ্কার গুলোয় নানা রং চড়িয়ে সেখানে তিনি জাহির করেন। অবশ্য আড়ালে আবডালে ওদের কেউ কেউ ওনাকে বদ্ধ উন্মাদও বলে থাকেন। যাহোক গাছদাদুর লেটেস্ট এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে কিছু খবর পাওয়া গেছে।এটা নাকি টপ সিক্রেট। দাদুর এক গুণমুগ্ধ ভক্তকে অনেক ধরেকরে যা জানা গেছে তা হল উনি কেবল্ টিভির তার আর কাপড় শুকানোর তার জয়েন করে,তারের অন্যদিকে হেডফোন লাগিয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত সব শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। অবশ্য তার আগে তিনি একটি ‘ সুপার সেনসিটিভ সার্কিট’ বসিয়ে নিয়েছেন হেডফোনে। একদিন তো তিনি নাকি পরিষ্কার শুনেছেন কে যেন বলছে “খিদে পেয়েছে, খিদে পেয়েছে’। এছাড়াও বাচ্চাদের কান্নার শব্দ,জল ঢালার শব্দ,জিভ ছোলার শব্দ তিনি শুনতে পেয়েছেন।
আর একজন দাদুর কথা লিখতে ইচ্ছে করছে।তাকে সকলে বলে ‘কানে তুলো দাদু'।নামটা কেমন যেন,তাই না?দাদুকে জানিও না যেন,চুপিচুপি বলে রাখি,ঐ নামটা আমরাই দিয়েছি।কেন জান?উনি সবসময় কানের ফুটোয় তুলো এঁটে রাখেন।এ যেন গবুচন্দ্র মন্ত্রীর মত,তাই না?আমরাও তো বলি,বুদ্ধি ঢাকতেই(নাকি বোকামি?)তার এই ব্যবস্থা ।অনেকে মজা করে বলে দাদু হলেন ইন্টারন্যাশনাল স্মাগলার।কানের ফুটোতেই ওয়ারলেস যন্ত্র বসানো আছে।সে যাই হোক,দাদু খুব ভাল মানুষ।আর একটা কথা বলতে ভুলে গেছি,কানে তুলো দাদু বাচ্চাদের খুব ভালবাসেন।বাচ্চারা সবসময় ওর সঙ্গে।আর কিছু না হোক,গোটা দশেক টাকা রোজ ওনাকে লজেন্স বিস্কুটের পিছনে গচ্চা দিতে হয়।তাতে অবশ্য তিনি বিন্দু মাত্র বিব্রত নন।
আর একজনের কথা বলি।সে হল পল্টু।পটকা টিঙটিঙে পল্টুর তেজ কিন্তু কম নয়।ঝগড়া হলে আস্তিন গুটিয়ে,জামার বোতাম খুলে ওই সবচেয়ে আগে এগিয়ে যায়।বলা বাহুল্য পরের ঘটনা পল্টুর পক্ষে মোটেই শুভ হয় না।হেঁপোরুগী পল্টুর পেছনে লাগে অনেকে,ব্যঙ্গ করতেও ছাড়ে না।আমার অবশ্য এইভাবে কারো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আঘাত দেবার ব্যাপারটা একেবারেই ভালো লাগে না।পল্টু কিন্তু খেলাধূলার অনেক খবর রাখে।আমরা মজা করে বলি 'এবার আপনাদের সামনে বক্তৃতা দিতে আসছেন স্বনামধন্য মহাকাপুরুষ শ্রীমান পল্টুকুমার।'এই গতকালের কথাই ধরনা।মাঠে একটা বড় রোলার পড়ে ছিল,পিচ রোলিং করার জন্য।হঠাৎ দেখি কে সেটাকে ক্লাবঘর পর্যন্ত প্রায় দুশো মিটার ঠেলে এনেছে।পল্টু জানাল সেই এটা করেছে।আমরা তো থ’।অনেক কষ্টে দুজনে মিলে আমরা সেটা ঠেলতে পারি।আর ও কিনা একাই!হঠাৎ ব্যায়ামবীর গবাদা আসতে ঘটনার নিষ্পত্তি হয়। আসলে গবাদাই ওটাকে এনেছে। পল্টু নিজের থেকেই হাত লাগিয়েছিল। তাতে অবশ্য সুবিধা হযনি কিছুই, বরং অসুবিধাই হয়েছে। কারণ গবাদাকে রোলার প্লাস পল্টু দুজনকেই ঠেলে আনতে হয়েছে। তবুও পল্টু তার অবদানের কথা তুলবেই।এই হল পল্টু।তারপর থেকে অনেকে পল্টুর পিছনে লেগে বলে 'পল্টুবাবু আমাদের বাড়িটা একটু ঠেলে রাস্তার মোড়ে নিয়ে আসবেন প্লিজ।' পল্টু ঠোঁটের কোনে একটু হাসি এনেই গম্ভীর হয়ে যায়।
আজ বিকেলে গুলমাষ্টারের সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প হল। অবশ্য গল্পটা একতরফাই হল। আমরা ক’জন বন্ধু চুপচাপই ছিলাম।গুলমাষ্টার একাই বকবক করে তার বিশাল জ্ঞানভান্ডার আমাদের কাছে উজাড় করে দিচ্ছিল।নাম শুনেই বুঝতে পারছ যে তার বেশিরভাগই গুল। তার মধ্যে রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কোলে বসে বিস্কুট খাবার গল্পটা পুরোনো হয়ে গেছে।এ ডিভিশনে ফুটবল খেলার গল্পটাও আজকাল চলে না।এখন চলছে যানবাহনের গল্প। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গাড়ি নাকি লরী।গুলমাষ্টার এককালে নাকি খুব লরী চালিয়েছে।পটলা এরোপ্লেনের কথা তুলতে গুলমাষ্টার বলে উঠল 'এরোপ্লেনে তো ব্রেকই নেই।'আমরা অবাক।বাপ্পা আপত্তি তুলতেই ও বলল 'সে সব হল পুরোনো এরোপ্লেন। আজকাল এরোপ্লেনে ব্রেক থাকে না। রানওয়েই এমন ভাবে তৈরি যে ওখানে ব্রেক দেবার ব্যবস্থা আছে। যেকোন বিষয়েই গুলমাষ্টারের অগাধ জ্ঞান। চার্লি চ্যাপলিন কার নকল করত, মারাদোনা কোন সিনেমায় অভিনয় করেছিল,অনুপ জালোটার চুলটা পরচুলা কিনা, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পিছনে ভিনগ্রহের মদত কতটা এসব জানতে হলে শিগগির চলে এসো আমাদের পাড়ায়। গুলমাষ্টারের আরও নতুন নতুন গুল বেরিয়েছে,সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। সে নাকি সামনের মাসেই রাশিয়া চলে যাবে। ওখানে ওর কি কাকা না জ্যাঠা আছে। সেখানেই এবার থেকে থাকবে। অবশ্য এর আগেও একবার গিয়েছিল, হিন্দি ভাষা শেখাতে।মাইনেটা নাকি বড্ড কম দিত।লাখদুয়েক।তাই পোষায়নি।বোঝো।এবার গুলমাষ্টারের পরিচয়টা দিয়ে দিই।ও একটা জামা কাপড় ইস্ত্রির দোকান চালায়। যখন জামা কাপড়ে দাগ লাগিয়ে ফেলে, লোকজন ওকে খুব বকাবকি করে, কাপড়ের দাম আদায় করার ভয় দেখায়,তখন গুল মাষ্টার শুকানো মুখে ক্ষমা চেয়ে নেয় আর ওর মুখ চোখে একটা করুন ভাব ফুটে ওঠে। তখন আমাদেরই দুঃখ হয়। মনে মনে বলি এ পোড়া দেশ তোমার জন্য নয়, তুমি রাশিয়াতেই চলে যেও।দেখ তোমার গুলগুলো সত্যি হয়েই নেমে আসবে। আমার মনে হয় গুলমাষ্টারও সেই একই প্রার্থণা করে।
আসল লোকটার কথাই এখনো বলা হয়নি। সে হল জগাপাগলা।ওর মেন কাজ বড় রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকে সাহায্য করা। ট্রাফিক পুলিশের অসুবিধা না সুবিধা কি হচ্ছিল বোঝা গেল না, কিন্তু সত্যি বলতে পাগলা জগার ট্রাফিক সেন্স কিন্তু ১৪ আনাই আছে, দেখলে অবাক হতে হয়। এবার ওর অন্য পরিচয়গুলো দিই। ফুটবল, ক্রিকেট থেকে শুরু করে সাঁতার, পড়াশোনা, মারামারি সবেতেই ও আছে।ও থাকবেই। তবে ফুটবল যখন খেলে,তখন ও একাই খেলে,মানে ওকে খেলতে দিতে হয়। কেউ যদি ওর পায়ের কাছে পড়েছে,তো তার পা খুলে যাবার জোগাড় হবে। মনে আছে পায়ের ব্যাথায় সাতদিন কষ্ট পেয়েছিলাম।আর কেউ যদি গোল মিস্ করেছে বা বাজে গোল খেয়েছে,তার আর নিস্তার নেই। গালাগাল, মারধোর সবই চলবে তার ওপরে।জগার গায়ে যা জোর,কে কি বলবে সাহস করে!অথচ ও নিজে গোল মিস্ করলে দোষটা অবশ্যই গিয়ে পড়বে পাঁচ হাত ,দশ হাত এমনকি মাঠের বাইরেরও কারোর না কারোর ওপর-নিশ্চিতভাবেই।লেখাপড়াতে ও খুবই ভাল, যদিও তিন বছর ধরে ক্লাস নাইনে পড়ছে।হল কি মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হতেই দেখি জগা হাসি হাসি মুখ করে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে।ও নাকি মাধ্যমিক পাশ করেছে। যাকগে, কোন ডিভিশন? ফার্স্ট ডিভিশন, দুটো লেটার। আমরা তো হাঁ।ও হেসে বলল ওটা ওর বাড়ির পরীক্ষা। ওর এক পাগলা কাকা আছে।সে প্রতি বছর ওর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক,বিএ,এম এ এসব পরীক্ষা নেয়। আমার মনে পড়ল গতবছর এইভাবে ও বিএ পাশ করে নিয়েছিল।আর এবার মাধ্যমিকের গন্ডীও পার হল।ওকে অভিনন্দন জানাতে ভুলিনি আমরা। সত্যিই এক বিরল সাফল্য। আর একটা গুণ আছে ওর,সকাল থেকে রাত, যতক্ষণ না ওর ঘুম পায়,ওর বাড়িতে টিভি চলে।কে দেখে জানিনা,তবে বেশ ভদ্রভাবেই চলে। কারণ ওদের বাড়ির ত্রিসীমানায় একটা কুকুরের লেজও চোখে পড়ে না। আমরা কোনমতে বেঁচে আছি, বেঁচে গেছেন কানেতুলো দাদু। দেখবে ঐ বিকট শব্দেও এবং উনি জগার পাশের বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও গুনগুন করে গান ধরেন “সবারে করি আহ্বান…”। বাস্তবিক সবারে আমন্ত্রণ কোনদিনও করেন না।মেয়ের বিয়েতে আমাকে নেমন্তন্নই করেন নি। খুব রেগে আছি তাই, বাড়ির দরজায় সেদিন বড় বড় করে লিখে এসেছি 'কানেতুলো দাদু’। এখনও সে লেখা দাদু তুলতে পারেনি, বিশ্বাস না হলে এখনই দেখে এস গিয়ে।
আর একজন দাদুর কথা লিখতে ইচ্ছে করছে।তাকে সকলে বলে ‘কানে তুলো দাদু'।নামটা কেমন যেন,তাই না?দাদুকে জানিও না যেন,চুপিচুপি বলে রাখি,ঐ নামটা আমরাই দিয়েছি।কেন জান?উনি সবসময় কানের ফুটোয় তুলো এঁটে রাখেন।এ যেন গবুচন্দ্র মন্ত্রীর মত,তাই না?আমরাও তো বলি,বুদ্ধি ঢাকতেই(নাকি বোকামি?)তার এই ব্যবস্থা ।অনেকে মজা করে বলে দাদু হলেন ইন্টারন্যাশনাল স্মাগলার।কানের ফুটোতেই ওয়ারলেস যন্ত্র বসানো আছে।সে যাই হোক,দাদু খুব ভাল মানুষ।আর একটা কথা বলতে ভুলে গেছি,কানে তুলো দাদু বাচ্চাদের খুব ভালবাসেন।বাচ্চারা সবসময় ওর সঙ্গে।আর কিছু না হোক,গোটা দশেক টাকা রোজ ওনাকে লজেন্স বিস্কুটের পিছনে গচ্চা দিতে হয়।তাতে অবশ্য তিনি বিন্দু মাত্র বিব্রত নন।
আর একজনের কথা বলি।সে হল পল্টু।পটকা টিঙটিঙে পল্টুর তেজ কিন্তু কম নয়।ঝগড়া হলে আস্তিন গুটিয়ে,জামার বোতাম খুলে ওই সবচেয়ে আগে এগিয়ে যায়।বলা বাহুল্য পরের ঘটনা পল্টুর পক্ষে মোটেই শুভ হয় না।হেঁপোরুগী পল্টুর পেছনে লাগে অনেকে,ব্যঙ্গ করতেও ছাড়ে না।আমার অবশ্য এইভাবে কারো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আঘাত দেবার ব্যাপারটা একেবারেই ভালো লাগে না।পল্টু কিন্তু খেলাধূলার অনেক খবর রাখে।আমরা মজা করে বলি 'এবার আপনাদের সামনে বক্তৃতা দিতে আসছেন স্বনামধন্য মহাকাপুরুষ শ্রীমান পল্টুকুমার।'এই গতকালের কথাই ধরনা।মাঠে একটা বড় রোলার পড়ে ছিল,পিচ রোলিং করার জন্য।হঠাৎ দেখি কে সেটাকে ক্লাবঘর পর্যন্ত প্রায় দুশো মিটার ঠেলে এনেছে।পল্টু জানাল সেই এটা করেছে।আমরা তো থ’।অনেক কষ্টে দুজনে মিলে আমরা সেটা ঠেলতে পারি।আর ও কিনা একাই!হঠাৎ ব্যায়ামবীর গবাদা আসতে ঘটনার নিষ্পত্তি হয়। আসলে গবাদাই ওটাকে এনেছে। পল্টু নিজের থেকেই হাত লাগিয়েছিল। তাতে অবশ্য সুবিধা হযনি কিছুই, বরং অসুবিধাই হয়েছে। কারণ গবাদাকে রোলার প্লাস পল্টু দুজনকেই ঠেলে আনতে হয়েছে। তবুও পল্টু তার অবদানের কথা তুলবেই।এই হল পল্টু।তারপর থেকে অনেকে পল্টুর পিছনে লেগে বলে 'পল্টুবাবু আমাদের বাড়িটা একটু ঠেলে রাস্তার মোড়ে নিয়ে আসবেন প্লিজ।' পল্টু ঠোঁটের কোনে একটু হাসি এনেই গম্ভীর হয়ে যায়।
আজ বিকেলে গুলমাষ্টারের সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প হল। অবশ্য গল্পটা একতরফাই হল। আমরা ক’জন বন্ধু চুপচাপই ছিলাম।গুলমাষ্টার একাই বকবক করে তার বিশাল জ্ঞানভান্ডার আমাদের কাছে উজাড় করে দিচ্ছিল।নাম শুনেই বুঝতে পারছ যে তার বেশিরভাগই গুল। তার মধ্যে রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কোলে বসে বিস্কুট খাবার গল্পটা পুরোনো হয়ে গেছে।এ ডিভিশনে ফুটবল খেলার গল্পটাও আজকাল চলে না।এখন চলছে যানবাহনের গল্প। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গাড়ি নাকি লরী।গুলমাষ্টার এককালে নাকি খুব লরী চালিয়েছে।পটলা এরোপ্লেনের কথা তুলতে গুলমাষ্টার বলে উঠল 'এরোপ্লেনে তো ব্রেকই নেই।'আমরা অবাক।বাপ্পা আপত্তি তুলতেই ও বলল 'সে সব হল পুরোনো এরোপ্লেন। আজকাল এরোপ্লেনে ব্রেক থাকে না। রানওয়েই এমন ভাবে তৈরি যে ওখানে ব্রেক দেবার ব্যবস্থা আছে। যেকোন বিষয়েই গুলমাষ্টারের অগাধ জ্ঞান। চার্লি চ্যাপলিন কার নকল করত, মারাদোনা কোন সিনেমায় অভিনয় করেছিল,অনুপ জালোটার চুলটা পরচুলা কিনা, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পিছনে ভিনগ্রহের মদত কতটা এসব জানতে হলে শিগগির চলে এসো আমাদের পাড়ায়। গুলমাষ্টারের আরও নতুন নতুন গুল বেরিয়েছে,সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। সে নাকি সামনের মাসেই রাশিয়া চলে যাবে। ওখানে ওর কি কাকা না জ্যাঠা আছে। সেখানেই এবার থেকে থাকবে। অবশ্য এর আগেও একবার গিয়েছিল, হিন্দি ভাষা শেখাতে।মাইনেটা নাকি বড্ড কম দিত।লাখদুয়েক।তাই পোষায়নি।বোঝো।এবার গুলমাষ্টারের পরিচয়টা দিয়ে দিই।ও একটা জামা কাপড় ইস্ত্রির দোকান চালায়। যখন জামা কাপড়ে দাগ লাগিয়ে ফেলে, লোকজন ওকে খুব বকাবকি করে, কাপড়ের দাম আদায় করার ভয় দেখায়,তখন গুল মাষ্টার শুকানো মুখে ক্ষমা চেয়ে নেয় আর ওর মুখ চোখে একটা করুন ভাব ফুটে ওঠে। তখন আমাদেরই দুঃখ হয়। মনে মনে বলি এ পোড়া দেশ তোমার জন্য নয়, তুমি রাশিয়াতেই চলে যেও।দেখ তোমার গুলগুলো সত্যি হয়েই নেমে আসবে। আমার মনে হয় গুলমাষ্টারও সেই একই প্রার্থণা করে।
আসল লোকটার কথাই এখনো বলা হয়নি। সে হল জগাপাগলা।ওর মেন কাজ বড় রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকে সাহায্য করা। ট্রাফিক পুলিশের অসুবিধা না সুবিধা কি হচ্ছিল বোঝা গেল না, কিন্তু সত্যি বলতে পাগলা জগার ট্রাফিক সেন্স কিন্তু ১৪ আনাই আছে, দেখলে অবাক হতে হয়। এবার ওর অন্য পরিচয়গুলো দিই। ফুটবল, ক্রিকেট থেকে শুরু করে সাঁতার, পড়াশোনা, মারামারি সবেতেই ও আছে।ও থাকবেই। তবে ফুটবল যখন খেলে,তখন ও একাই খেলে,মানে ওকে খেলতে দিতে হয়। কেউ যদি ওর পায়ের কাছে পড়েছে,তো তার পা খুলে যাবার জোগাড় হবে। মনে আছে পায়ের ব্যাথায় সাতদিন কষ্ট পেয়েছিলাম।আর কেউ যদি গোল মিস্ করেছে বা বাজে গোল খেয়েছে,তার আর নিস্তার নেই। গালাগাল, মারধোর সবই চলবে তার ওপরে।জগার গায়ে যা জোর,কে কি বলবে সাহস করে!অথচ ও নিজে গোল মিস্ করলে দোষটা অবশ্যই গিয়ে পড়বে পাঁচ হাত ,দশ হাত এমনকি মাঠের বাইরেরও কারোর না কারোর ওপর-নিশ্চিতভাবেই।লেখাপড়াতে ও খুবই ভাল, যদিও তিন বছর ধরে ক্লাস নাইনে পড়ছে।হল কি মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হতেই দেখি জগা হাসি হাসি মুখ করে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে।ও নাকি মাধ্যমিক পাশ করেছে। যাকগে, কোন ডিভিশন? ফার্স্ট ডিভিশন, দুটো লেটার। আমরা তো হাঁ।ও হেসে বলল ওটা ওর বাড়ির পরীক্ষা। ওর এক পাগলা কাকা আছে।সে প্রতি বছর ওর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক,বিএ,এম এ এসব পরীক্ষা নেয়। আমার মনে পড়ল গতবছর এইভাবে ও বিএ পাশ করে নিয়েছিল।আর এবার মাধ্যমিকের গন্ডীও পার হল।ওকে অভিনন্দন জানাতে ভুলিনি আমরা। সত্যিই এক বিরল সাফল্য। আর একটা গুণ আছে ওর,সকাল থেকে রাত, যতক্ষণ না ওর ঘুম পায়,ওর বাড়িতে টিভি চলে।কে দেখে জানিনা,তবে বেশ ভদ্রভাবেই চলে। কারণ ওদের বাড়ির ত্রিসীমানায় একটা কুকুরের লেজও চোখে পড়ে না। আমরা কোনমতে বেঁচে আছি, বেঁচে গেছেন কানেতুলো দাদু। দেখবে ঐ বিকট শব্দেও এবং উনি জগার পাশের বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও গুনগুন করে গান ধরেন “সবারে করি আহ্বান…”। বাস্তবিক সবারে আমন্ত্রণ কোনদিনও করেন না।মেয়ের বিয়েতে আমাকে নেমন্তন্নই করেন নি। খুব রেগে আছি তাই, বাড়ির দরজায় সেদিন বড় বড় করে লিখে এসেছি 'কানেতুলো দাদু’। এখনও সে লেখা দাদু তুলতে পারেনি, বিশ্বাস না হলে এখনই দেখে এস গিয়ে।