আমি আবেগ ও অনুভূতিপ্রবণ,ভাবুক আর সৃষ্টিশীল।জীবনের চলা,ওঠাপড়া আর অভিজ্ঞতা নিংড়োনো এই সব লেখা ।এ আমার পাগল মনের নিঃশেষিত প্রকাশ।
20 February 2020
ট্যাবু
যা ভয় করেছিলুম, ঠিক তাই হল। লোকসভা ভোটে পোলিং অফিসার হিসেবে আমারই নাম উঠল। লিস্টে নামটা দেখে, যাও বা ভেবেছিলুম ও তো মাত্র দু’দিনের ব্যাপার, ঠিক মেরে দেব; ট্রেনিং ফ্রেনিংও নিয়ে নিয়েছিলুম খুব উৎসাহে; কিন্তু ভোটের আগের দিন সকালে বিনপুরে রিপোর্টিংয়ের সময়, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। পোস্টিং হয়েছে মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ীতে। ভারাক্রান্ত মনে বাকি অফিসারদের খুঁজেপেতে বের করতে করতে বেলা গড়িয়ে গেল। সবার মুখেই দেখলুম একই কথা, ‘যাঃ শালা, শেষে বেলপাহাড়ি।‘ ঝামেলা প্রবণ এলাকা বলে কুখ্যাত জায়গাটা, তার ওপর বছরখানেক আগেই ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ক’জনের মৃত্যুও হয়ে গেছে এখানে। শহুরে মানুষ, পারতপক্ষে এড়িয়ে চলতে চাই এসব জায়গা। কিন্তু সরকারি চাকরি বড় বালাই।
ব্যাজার মুখে মালপত্র সমেত সকলে উঠে বসলুম লজঝড়ে বাসটায়, গন্তব্য বেলপাহাড়ী। ভাঙাচোরা রাস্তা, চারিদিকে শাল-পিয়াল-সেগুন আর মহুয়ার ঘন সবুজ জঙ্গল, কোথাও বা ফাঁকা ধু ধু মাঠ ,ছোট ছোট টিলা। মনে মনে ভাবছিলুম ভোটের দিন ঝুটঝামেলা হবে না তো? দাঁতে দাঁত চেপে ডেঞ্জার এরিয়াটা পেরিয়ে গিয়ে, তবে শান্তি হল। শেষমেষ ক্লান্ত শরীরে পৌঁছে গেলুম স্কুল বাড়িটায়, সূর্য ততক্ষণে ঢলতে শুরু করেছে দিগন্তরেখার ওপারে।
দেখলুম স্কুলটাতে বন্দোবস্ত সব মোটামুটি ভালই। দারোয়ান নরহরি মাহাতো এসে চা বিস্কুট দিয়ে গেল, সঙ্গে গরম গরম বেগুনি। ও এই স্কুলেই থাকে,সঙ্গে ওর বউ লক্ষ্মী। রাতে দেশি মুরগির ঝোল আর রুটির অর্ডার দিয়ে, আমরা বসে গেলুম ইভিএম মেশিন আর কাগজপত্র সব রেডি করতে। কাল সকাল থেকে আর দম ফেলার ফুরসত থাকবে না। আমাদের খোঁজখবর নিয়ে গেলেন লোকাল এমএলএ,পঞ্চায়েত প্রধান আরও সব নেতারা, ওনারা সব আশ্বাস দিয়ে গেলেন, কোন অসুবিধা হবে না , এখন নাকি এখানে আর আগের মত কোন উপদ্রব নেই ,সব শান্ত হয়ে গেছে।শুনে মনে একটু ভরসা পেলুম, নইলে দুজন হোমগার্ড আর দুজন রাইফেলধারী হাবিলদারকে দেখেও খুব একটা ভরসা হচ্ছিল না। এই এলাকার নানা হিংসাত্মক ঘটনার কথা, গাড়িতে আসতে আসতে সবারই মুখে মুখে ফিরছিল আর মুখটা শুকিয়ে যাচ্ছিল, এখন মনে হল ফালতুই ভয় পাচ্ছিলুম।
যাই হোক কাগজপত্র সব রেডি করে, খামে ভরে, সব মিলিয়ে, লেখালেখি এসব সারতে সারতে ঘন্টাদু’য়েক লেগে গেল।তারপর সকলে বাইরে খোলা মাঠে বেরিয়ে এসে, খাটিয়ার উপর বসে একটু হাত পা ছড়াতে ছড়াতে ভাবলুম, আর এক প্রস্থ চা হলে মন্দ হয় না। প্রিসাইডিং অফিসার মাধববাবু বয়োঃজ্যেষ্ঠ, স্কুলশিক্ষক। বেশ আমোদি মানুষ, হাসি-ঠাট্টা চলছিল। আমার বয়সীও দুজন আছে- সুবিমল আর নারান। সবাই মিলে চললুম নরহরির ঘরের দিকে, চায়ের অর্ডার করতে ।নরহরি তো এক কথায় রাজি। ততক্ষনে মুরগির ঝোল রান্নাও প্রায় হয়ে এসেছে। ওর বউ লক্ষ্মী ঘোমটা টেনে উনুনে চায়ের জল বসিয়ে দিল। নরহরি একটা নড়বড়ে বেঞ্চি ঝেড়েঝুড়ে আমাদের বসতে দিল, আমরাও খোশগল্পে মেতে উঠলুম।সবে আটটা বাজে, এখন ডিনার করতে অনেক দেরি।
নরহরি চায়ের কাপ সবার হাতে ধরাতে ধরাতে বলল, ‘বাবুরা, তুয়ারা সব শহুরে লোক বটে, হেই গ্রামে আইছিস, টুকু অসুবিধা হবেক। কুছু মনে করিস না।‘ গ্রাম্য টান থাকলেও স্কুলে দারোয়ানগিরি করায় ও বেশ মিশুকে, কথাবার্তাও অনেকটাই পরিষ্কার। আমরা হেসে বললুম, ‘না গো, কোন অসুবিধা হচ্ছে না। এইতো যখন যা চাইছি, পেয়ে যাচ্ছি।‘ ওর ঘরে কে কে আছে, জিজ্ঞেস করতে বলল, শুধু ওর বউ রয়েছে, বাচ্চাকাচ্চা হয়নি। নানা কথার ফাঁকে, অবিশ্যম্ভাবী ভাবেই এলাকার ঝুট-ঝামেলার প্রসঙ্গ উঠল।
‘হ্যাঁ গো,নরহরিদা, তোমাদের এখানে আর ওরা আসে না? ঝামেলা পাকায় না?’ আমাদের উৎসাহী প্রশ্ন।
‘ই বাবু,ঝামেলা বলছিস কেনে, সব লোক তো আর খারাপ নয় বটে।‘
‘সে কি গো? বোমা মেরে ,গুলি করে, কত লোক মেরে ফেলল,আর তুমি বলছ খারাপ লোক নয়! তুমিও কি তাহলে.......’
‘নাই রে বাবু, এইটো আমি বলতে চাই নাই রে। আমি বলছিলাম উয়াদের চাইয়েও খারাপ জিনিস রইছে বটে গাঁয়ে, জানিস কি তুরা?’
‘কী জিনিস গো ?’
‘জাত-পাত রে বাবু, বড় জাতপাত।ই যেন আগুনপারা। মুরা আদিবাসী বটে, মুদের মধে অনেক পুরানো জিনিস রইছে, আজও রইছে,সেইটো থেকে মুরা বাড়াইতে পারব নাই।‘
‘কি জিনিস শুনি? জাত নিয়ে লড়াইয়ের কথা বলছ নাকি?’
‘হ রে বাবু।ই করে কত লোক যে মইরে গেল তা তো বইলতে পারব নাই।‘
‘হ্যাঁ, আমরাও শুনেছি কিছু কিছু। তুমি একটু খুলেই বলোনা, শুনি ।‘
‘তবে শুন রে বাবু, ই তো ছয় মাইস হইল গিয়া’ নরহরির গলায় গল্পের ছোঁয়া। আমরা চুপ করে বসে রইলুম আগ্রহী শ্রোতা হয়ে ,সঙ্গে চায়ের কাপে চুমুক।
‘মুদেরই ঘরে পারে সরেন বলে এটা মাইয়া ছেল,উয়ার বাপের অবস্থাও ভালোই ছেল বটে। তো উয়ারই বিয়া হইছেল, দুই বইছর আগে গাঁয়েরই কাশীনাথ বলে এক চাষী ঘরে। উয়ারও বাবা ছেল মোড়ল বটে। সে যা হোক, উয়াদের বিয়াতে পুরা গাঁয়ের নিমন্তন্ন ছেল, খাওয়াইছেলও ভাল।‘
‘তারপর?’
‘উয়াদের বিয়ার পর সব ঠিকঠাকই ছেল, কিন্তু একদিন হঠাৎ অঘটন ঘইটে গেল,বুঝলি বাবু, কাশীনাথ সাপের কামড়ে মইরে গেল হঠাৎ, চিকিৎসার সুযোগও দেল নাই রে।খরিস সাপ ছেল বটে, পুরা বিষটোই ঢাইলে দেছেল ।‘
আমরা উৎসাহী শ্রোতা, গল্প জমে উঠেছে। ভিতর থেকে লক্ষী এসে নরহরির কানে কানে কি যেন বলে গেল। নরহরি বলল,’বাবুরা,রান্না হই গেছে।‘ মাধববাবু বললেন’ও ঠিক আছে। আগে ঘটনাটা বল। খেতে এখন দেরী আছে,সবে তো সাড়ে আটটা।‘
‘তো সোয়ামি মইরে যাবার পর, কয়দিন মনমরা ছেল পারে। বিধবা হইলে যিমন নিয়ম কানুন মাইনতে হয়, তেমনি ছেল। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কানাঘুষা শুনা যাতে লাগল, গাঁয়ের সক্কলি শুনে ছ্যা ছ্যা করতে লাগল। মাইয়াছ্যালের ইমন চরিত্তির ।‘
‘কেন, কি হয়েছিল?’
‘আর বলিস নাই বাবু, পাশের গাঁয়ের একটো মোছলমানের ব্যাটার সঙ্গে পিরিতি হয়ে গেল মাইয়াটার । নাছিরুদ্দিন না কি যেন নাম ছিলাটোর ।যাকে বলে অবৈধ সম্পর্ক,নিষিদ্ধ সম্পর্ক।‘
‘কেন গো?মন দেওয়া নেওয়া নিষেধ হতে যাবে কেন? বিধবাদের কি আর বিয়ে হয় না?’আমি আর থাকতে না পেরে বললুম।
‘নাই রে বাবু, ই তুদের শহর লয় রে । আদিবাসীদের মধ্যে ইসব নাই । মোড়লই শেষ কথা। বিয়া করলে আদিবাসীদের মধেই করতে হবেক, ইমনই নিদান। তুয়ারা সিসব বুঝবি নাই।ই তো তারপর মোছলমানের ছিলা,মুদের সমাজ মাইনে নিবেক কি?’
‘সে তো ঠিক,আরে তারপরে বল না হরিদা।‘ নারাণ আমাকে থামায়। কখন যে নরহরি ওর কাছে শুধু হরিদা হয়ে গেছে কে জানে!
’ তারপরেই তো কেচ্ছার শুরু রে বাবু। পারে আর ছিলাটো লোকলইজ্জার ভয়ে পালাই গেল একদিন, ঘর দুয়ার সব ছাইড়ে।কুথায় কুন নদীর চরে থাকতেও শুরু কইরেছিল দুইজনে বিয়াশাদী করে সোয়ামী-স্ত্রীর মতো।‘
আমার কাপের শেষ চা টুকু কখন গল্প শোনার নেশায় জুড়িয়ে ঠান্ডা, চুমুক দিতে ভুলে গেছে সুবিমলও।মাধববাবুর তো মুখ দিয়ে আওয়াজই বেরোচ্ছে না । ‘তারপর?’ শুধু একবার বললেন।
‘তারপর আর কি? মুদের আদিবাসী সমাজ এইটো মানতে পারল নাই।দল বাঁইন্ধা আদিবাসীরা তীর-ধনুক লিয়ে খুঁজতে বিরালো।পারের বাপ মোড়লের পায়ে ধরেছিল, মাফ করে দিতে বলেছিল।কিন্তু কেউ শুনেনি উয়ার কথা,উল্টে দু’ চার ঘা বসাই দেছিল উয়াকে। চোখের জল মুছতে মুছতে মুখ লুকাইছিল বাপটো। আদিবাসীরা নিজেদের জাতপাত লিয়ে খুব সজাগ বটে,কুনো আঘাত সইতে পারবেক নাই, ফুঁসে উঠে, খুনখারাপি করতেও বাধে নাই,বুঝলি?‘
‘সেকি গো,তা বলে খুন?’
‘আর বলিস কেনে বাবু, সবাই রাতের বেলায় দল বাঁইন্ধা বেলপাহাড়ি জঙ্গলে ঘিরে ফেলল উয়াদের।আর উদিকে পারের ভাইকে দিয়ে ডাইকে পাঠাল পারে আর নাছিরুদ্দিনকে। মিটমাটের জন্য ডাকা হয়েছে ভাইবে আসে হাজির হল উয়ারা। কিন্তু না, প্রতিশুধের আগুন বড় মারাত্মক বটে।‘
‘শেষে মেরে ফেলল?’ নারান ব্যাকুল।
‘পচাশ জন আদিবাসী ঘিরে ধরে দুজনাকেই কুপাতে লাগলো। উয়াদের দোষ, বেজাতে বিয়া করেছে সমাজের পরোয়া না করে। মানুষের কি ঘিন্না বটে।রক্তগঙ্গা বয়ে গেল, দুজনাই শেষ হয়ে গেল, জানিস বাবু। তবু শেষ পর্যন্ত দুজনেই দুজনার হাত শক্ত করে ধরে ছেল, আলাদা হইতে দেয় নাই। তারপর মেরে উয়াদের লাশ নদীতে ফেলে দিল গাঁয়ের মরদরা, আর খুঁজে পাওয়া যায় নাই।‘
‘দু’ দুখানা খুন, পুলিশ কেস হল না?’
‘হুঁ,পুলিশ!’কান্না মাখা মুখেই ব্যাঙ্গের হাসি হেসে উঠল নরহরি, আমাদের সকলের হরিদা।
‘ইখানে পুলিশ ফুলিশ কিছু চলে নাই রে বাবু, ইখানে মোড়ল আর উয়ারাই শেষ কথা।‘ মাথাটা নিচু করে অস্ফুটে বলে ওঠে হরিদা।
সত্যিই, ভালবাসার দাম দেয় না এই সমাজ, জাতপাত আর সাম্প্রদায়িকতার বিভেদটাই এখানে সব।মনটা ভারী হয়ে গেল, আর কোন কথা বলতে করোরই তেমন ইচ্ছা হচ্ছিল না। চোখে ভাসতে লাগল ভালবাসার বাঁধনে আবদ্ধ এক পুরুষ আর নারীকে কুপিয়ে মেরে, নদীর জলে লাশ ফেলে দেওয়ার দৃশ্য, যারা তখনও ধরে আছে একে অপরের হাত ।
মুরগির ঝোলটা রাতে আর মুখে তেমন রুচল না, যদিও রান্নাটা হয়েছিল চমৎকার। মাথায় তখন সমাজ ব্যবস্থার ফাঁকফোকরগুলো কুরে কুরে খাচ্ছে, কোন প্রতিবিধান নেই। নিজেকে, নিজের অভাগা দেশকে, দেশের মানুষগুলোকে, খুব দোষী বলে মনে হচ্ছিল।খেয়ে উঠে শুয়ে শুয়েও নিজেদের মধ্যে এসব নিয়েই কিছুক্ষণ আলোচনা চলল, ঘুম আসছিল না। এই প্রেমকাহিনীর নিদারুন পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলুম না।শেষে মাধববাবুর ধমকে কাজ হল। ‘কাল ভোট, ভোরবেলা উঠতে হবে।সবাই ঘুমিয়ে পড়ো।‘ আর একবার নিজের দায়িত্ব মনে মনে ঝালিয়ে নিতে নিতেই ক্লান্তিতে ঘুম এসে গেল।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলুম ।জঙ্গলের মধ্যে জ্যোৎস্নার আলোয় চারিদিক ধুয়ে যাচ্ছে আর একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একে অপরের হাত ধরে, একটা টিলার ওপর বসে আছে। আর কেউ নেই কোথাও, ওরা যেন একাত্ম হয়ে গেছে প্রকৃতির মাঝে। জ্যোৎস্নার আলো ভালোবেসে, ওদের সারা শরীর বেয়ে নেমে আসছে মাটিতে,বড় বড় গাছগুলো সব ওদের ঘিরে ধরেছে,আদর করছে যেন, স্বীকৃতি দিচ্ছে ওদের প্রেমকে,লুকিয়ে রাখছে নিষ্ঠুর সমাজের থেকে। ওদের আর কোন পাপ নেই, কালিমা নেই, ওরা দুজন যেন মানব-মানবীর চিরন্তন প্রেমের একটা প্রতীক। ওদের কি সুন্দর আর পবিত্র দেখাচ্ছিল ।
পরদিন ভোরে উঠে হুড়োহুড়ি লেগে গেল ।সেই ভোর থেকে সন্ধ্যে ছটা অব্দি আর দম ফেলবার ফুরসত পেলুম না। ভোটার সংখ্যা প্রচুর, ভোট দেবার উৎসাহেরও অভাব নেই ।যদিও খুব একটা ঝুটঝামেলা হল না, কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ভোট শেষ করা গেল না, এত লম্বা লাইন। বেশিরভাগ লোকই মাঠ থেকে কাজ সেরে ফিরে, বিকেলে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছে। ছটা নাগাদ ভোট শেষ হতে মেশিন ,কাগজপত্র সব সিল করে কোনরকমে ট্রাঙ্কে ঢোকাতে ঢোকাতেই অন্ধকার হয়ে গেল চারিদিকে। ততক্ষণে বাস এসে গিয়েছে, ডিউটি শেষ। এবার বিনপুরে সব জমা দিতে পারলেই শান্তির রিলিজ।
ফেরার সময় হরিদার সঙ্গে দেখা করে, টাকা-পয়সা-বখশিশ সব বুঝিয়ে দেবার সময়, আবার মনে পড়ে গেল কালকের ঘটনার কথা। তখন আর বেশি কথা বলার সময় নেই, বাড়ি ফেরার তাড়া । ইভিএম, কাগজপত্র সব ঠিক মতো সামলে নিয়ে যাবার টেনশন ।তবু হঠাৎ সুবিমল বলে উঠল ‘হরিদা,পারে তোমার কে হয়?’হরিদা কিছু বলল না, চোখটা গামছার খুঁট দিয়ে একটু মুছেই, ফিরে চলল নিজের ঘরের দিকে,ঘরে ঢুকেই দোর দিল। আমাদের বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল,তবে কি পারে ওর খুব কাছের কেউ ছিল?বাসের ড্রাইভার, হাবিলদাররা ততক্ষণে তাড়া দিতে শুরু করেছে।মাধববাবু একা ট্রাঙ্ক পাহারা দিচ্ছেন তিনিও তাগাদা দিলেন । বাক্যহারা আমরা ধীর পায়ে বাসে গিয়ে উঠলুম, বাস ছেড়ে দিল। আমাদের পিছনে পিছিয়ে যেতে লাগল গ্রাম্য মেঠো রাস্তা, জঙ্গল, ধু ধু প্রান্তর, ছড়ানো-ছিটানো একটা দুটো মাটির বাড়ি। মনে হল এই এখানেই কোথাও, মাত্র কয়েকমাস আগে একটা দারুণ প্রেম জমে উঠেছিল,যা ছিল এদের ভাষায় অবৈধ বা নিষিদ্ধ প্রেম। মনে মনে যেন সেই দৃশ্যগুলো দেখতে পেলুম ,যে প্রেমের শেষ মৃত্যুর করুণ পরিণতিতে। না ,ভুল বললুম, শেষ তো নয়, ওরা যে হাত ধরে, মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে নদীতে ভেসে গিয়েছিল। হয়ত এখনও হাত ধরেই আছে, সেই দিনের মতই।
5 February 2020
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ
প্রীতম ফোনটা রেখে উত্তেজনায় হাঁফাচ্ছিল ।অনন্যা আসছে ওর ফ্ল্যাটে,আর ফ্ল্যাটে সে এখন একা।
অনন্যাই ক’দিন ধরে বলেছিল, “তোমাদের ফ্ল্যাটটা দেখতে যাব। কবে যাব, বল। "
"বাবা মা তো দু’একদিন পরেই ছোটমাসির বাড়ি যাবে। তখন আমি তোমাকে ফোন করে দেব। তুমি চলে এস।“
“বাহ,দারুন মজা হবে।তোমার সব কবিতার বই দেখব সেদিন।“
এসে গেল সেই দিন । বিকেলে ওদের ফ্ল্যাটের কমন ফোন থেকে অনন্যার বাড়ির নীচের পিসিও বুথে ফোন করে ওকে ডেকে নিল প্রীতম। জানিয়ে দিল “চলে এস, বাবা মা নেই, রাস্তা ক্লিয়ার।“ অনন্যা বলল, “ওকে, ডার্লিং। এখনই আসছি, পাঁচ মিনিটের মধ্যে।“ প্রীতমের বুকের মধ্যে হার্টটা যেন তখন আনন্দে লাফাচ্ছে। বাবা-মা তো এই সবে বেরোলেন। আসতে এখনও ঘন্টা দুয়েক।প্রীতম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, চুলটায় হাত চালিয়ে আলগাভাবে গুছিয়ে নিল, একটু কেয়ারলেস থাক।
অনন্যা এসেছিল,যদি বাবা-মার কানে যায় সর্বনাশ হবে ,ভাবতেই শিউরে ওঠে ও।কিন্তু এখন আর ফিরে যাবার উপায় নেই,একটু রিস্ক তো নিতেই হয়।মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে প্রীতম।ধুর,কেউ জানতে পারবে না, মাত্র তো এক ঘণ্টার ব্যাপার।
কেউ কি আসছে? সিঁড়িতে পায়ের শব্দ ওকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে যায়।
(এরপর কি হল?পুরো গল্পটা পড়তে হবে তাহলে)
Subscribe to:
Posts (Atom)