31 August 2019

বাপ্পা আর ভোরবেলার কাক

সেদিন কাকভোরেই ছাদে উঠেছিল বাপ্পা। ক'দিন ধরে এত গরম পড়েছে, যে ভোর হতে না হতেই ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। তারপর আর শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে না। এখন স্কুলে গরমের ছুটি, তাই সকালটা একটু ধীরেসুস্থে কাটাতে পারে বাপ্পা। নইলে এখন তো বাড়িতে হুড়োহুড়ি পড়ে যাবার সময়। দাঁত মেজে, চোঁ চোঁ করে হরলিক্স খেয়ে, জামা-প্যান্ট- জুতো-মোজা ঝটপট পরে নিয়ে, ব্যাগ-জলের বোতল-টিফিন নিয়ে ছুটেমুটে স্কুলের বাস ধরতে ছুটতে হয়। আর তার সঙ্গে রয়েছে মার সমানে তাড়া লাগানো। সেসব থেকে এখন ক'দিন মুক্তি, হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে বাপ্পা। কিন্তু অভ্যাস যাবে কোথায়? সেই সাতসকালেই উঠে পড়ছে ঘুম থেকে। কিন্তু এ সময় বাড়ির বাকি সকলের ঘুম ভাঙানো বা বিরক্ত করা মানা, বেদম বকুনি জুটবে। তাই ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে, বাপ্পা সোজা ছাদে উঠে যায়। এটাই বাড়ির মধ্যে ওর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা, ঠান্ডা হাওয়ায় শরীরটা জুড়িয়ে যায় এসময়। সেদিন সকালে ছাদে উঠে দেখে তুলকালাম কান্ড। দুটো কাকের বাচ্চা ছাদের পাঁচিলে বসে খুব মারামারি লাগিয়েছে। তারস্বরে 'কা' 'কা' করে ডেকে, ডানা ঝাপটিয়ে, পা দিয়ে লাথালাথি করে সে কি হুটোপুটি। দরজার চৌকাঠে বসে তাই দেখে বাপ্পা। কিছুক্ষণ পরে মারপিটটা অবশেষে থামে ,আর সবটুকু পেস্ট গিলে ,সাদা ব্রাশ নিয়ে নীচে নেমে আসে বাপ্পা ।সত্যি, কাকগুলো যা ঝগড়ুটে, বলার নয়। কেন যে ওদের এত মারপিট লাগে কে জানে? তবে কাকেদের নিয়ে চিন্তা করার আর অবকাশ পাওয়া যায় না, বাবা মুড়ি-বিস্কুট খেয়ে পড়তে বসার হুকুম করেন। কিন্তু পড়তে বসেও ওর মন ছুটে যায় এদিক-ওদিক। কোথায় পিঁপড়েরা লাইন দিয়ে চলেছে, টিকটিকিটা ঘুলঘুলি থেকে মুখ বাড়াচ্ছে, জানলার বাইরে আমগাছটার পাতাগুলো দুলছে, দূরে নীল আকাশে সাদা মেঘ ভেসে চলেছে-এখনই যেন ভারতবর্ষের ম্যাপ হয়ে যাবে, এসবই দেখে। ওদিকে শুনতে পায় পাশের বাড়ির মৌদি হারমোনিয়াম নিয়ে গলা সাধছে, সাধনকাকু অ্যা অ্যা করে জিভ ছুলছে, গলিতে পাঁউরুটিওলা হেঁকে যাচ্ছে, নীচে রাস্তার কলে বালতি পাতার শব্দও পাওয়া যায়। হঠাৎ কোত্থেকে একটা বাচ্চা কাক উড়ে এসে জানলার পাশটাতে বসল। সেই কাকটা নাকি! সেই যে ছাদে যেটা খুব ঝগড়া করছিল! অবশ্য সব কাকই দেখতে একইরকম লাগে, শুধু দাঁড়কাকগুলোকে একটু আলাদা করে চেনা যায়। অবশ্য দাঁড়কাক আর আসে কই এ তল্লাটে! চারদিকে শুধু এই পাজি আর চোর কাকগুলোর দৌরাত্ম্য। হঠাৎ কাকটা একবার 'কঃ' করে অদ্ভুত স্বরে ডাকল। কি বলতে চাইছে ও? কাকটা বসে বসে, একবার বুকে মাথা গুঁজছিল আর একবার বাপ্পার দিকে তাকাচ্ছিল। যেন বলছিল, "সরি ভাই, সকালে রাগের মাথায় একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি, ক্ষমা করে দাও এবারের মত।" কিন্তু তখনই বাপ্পার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে গেল। "কি পড়ছ বাপ্পা, শব্দ পাচ্ছি না কেন?" বলে বাবার হাঁক শুনেই ও প্রকৃতিবিজ্ঞান চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়তে শুরু করে দিল। কয়েকদিন পরের কথা, বাপ্পার সেদিন মনটা খুবই খারাপ। একে তো দুদিন পর পর বৃষ্টি হয়ে, আকাশ এখনও গোমড়া মুখ করে আছে, তার ওপর জমা জলে লাফালাফি করে পা ভেজানোর জন্য মার একচোট বকুনিও শুনতে হয়েছে। ওদিকে আবার ছাদে জল সোক করে, ঘরে জল পড়া নিয়ে মা আর বাবার মধ্যে একপ্রস্থ ঝগড়াও শুরু হয়ে গেছে। বাবা-মার ঝগড়া হলে বাপ্পার খুবই মন খারাপ লাগে। কে ঠিক আর কে ভুল ও ঠিক করতে পারে না,মনে হয় দুজনেই ভুল। তখন ওর নিজেকে খুব একা মনে হয়। মনে হয়, বাবা-মা এরকম তুচ্ছ কারণে এত ঝগড়া করে কেন? তার চেয়ে চুপচাপ সব শুনে গিয়ে বিজ্ঞের মত ঘাড় নাড়তে পারে না? ক্লাসে ও যেমন করে। তাহলেই তো মিটে যায়! তবে মন খারাপটা বেশিক্ষণ থাকে না ,পাড়ার বন্ধুরা সব হৈ হৈ করে খেলতে আসে। তাদের সঙ্গে একতলায় ক্যারাম ,টেবিল টেনিস খেলা নিয়ে মেতে যায় ও। হঠাৎ বাবার ডাক আসে, এক্ষুনি বাজারে যেতে হবে কিসব কিনতে আর ছাদ সারানোর মিস্ত্রিরও খোঁজ করতে হবে। কি আর করা! অনিচ্ছা সত্বেও বন্ধুদের বিদায় দিয়ে বাবার সঙ্গে রাস্তায় বেরোতেই হল। হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যাবার পর বাজারের ঠিক মুখেই, হঠাৎ একটা ভিখিরি হাত পাততে, বাবা ভিক্ষে না দিয়েই চলে গেল। বাবার সঙ্গে রাস্তায় বেরোনোটা নতুন নয়, আর বাবারও ভিখিরিদের পয়সা না দেওয়াটাই স্বভাব। কিন্তু এই ভিখিরিটা যেন একটু অন্যরকম, একটা ওরই বয়সী ছেলে, খালি পায়ে, খালি গায়ে সাদা কাপড়ের থান পরে, ভিক্ষে চাইছিল। বলছিল ওর বাবা নাকি মারা গেছে, কিছু সাহায্য করতে। বাবা তো সেসব পাত্তাই দিল না, ছেলেটার পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল, তারপর বাপ্পাকে বলতে লাগল, "এসব ফলস্ , জানিস তো। ওর বাবা মারা গেছে না ছাই, পয়সা পাওয়ার জন্য এসব ওদের নিত্যনতুন কায়দা, একদম বিশ্বাস করবি না ।" কিন্তু বাপ্পার কেমন যেন লাগল , ও জানে ভারতবর্ষে গরিবের সংখ্যা কত বেশি, কি তাদের কষ্ট। তাদের সবাই কি এমন অভিনয় করে? বাপ্পার বারবার মনে হচ্ছিল, আহা রে, এই ছেলেটা সত্যিই খুব গরিব ছিল আর সত্যিই ওর বাবা মারা গেছে। ওর টাকার নিশ্চয়ই খুব দরকার, সবার ওকে সাহায্য করা উচিত ছিল। কিন্তু এখন কি হবে, সবাই যদি ওকে এরকম ভুয়োভিখিরি ভাবে আর ভিক্ষে না দেয়! ও কি তাহলে একটাও টাকা পাবেনা! বাবার ওপরও বাপ্পার খুব রাগ হয়। মনে পড়ে, বাবা ভিখিরিদের সম্পর্কে বলেছিল, "এত লাখ লাখ ভিখিরি রোজ রোজ ভিক্ষে চাইলে কি আর দেওয়া যায় রে! তাই, ভিখিরি দেখলেই মাথায় হাতটা ঠেকিয়ে, নমস্কার করে চলে যাই। মানে হল, মাফ কর বাবা, আমি দিতে পারব না। অথচ দিচ্ছি না বলে তুমি কিছু মনেও করতে পারবে না। ওই যে কপালে হাতটা ঠেকালুম, ওটাই রীতি।" বাপ্পাকে অবশ্য কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। ওর থেকে সাধারণত কেউ ভিক্ষে চায় না। শুধু একবার দল বেঁধে সব বন্ধুরা স্কুল থেকে ফেরার সময়, রাস্তার মধ্যে একটা বুড়ো ভিখিরি ভিক্ষে চেয়েছিল। বাপ্পার কেমন একটা লজ্জা করেছিল, ওর কাছে একটাও টাকা না থাকায়। যা সামান্য টাকা থাকে, সেদিনই সব খরচা করে ফেলেছে টিফিনে আইসক্রিম খেতে গিয়ে। তাছাড়া রোজ মা'ই তো ওকে নিতে আসে স্কুল থেকে, শুধু সেদিন তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছিল বলেই, বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল। ওর বেস্টফ্রেন্ড সাত্যকি ভিখিরিটাকে বলেছিল, " আমাদের কাছে টাকা নেই।" কিন্তু অজয় যখন পকেট থেকে পাঁচ টাকার একটা কয়েন বের করে বুড়ো ভিখিরিটার কাঁসিতে রেখে দিয়েছিল, ভিখিরিটা মাথায় হাত তুলে আশীর্বাদ করে বলেছিল, "রাজা হও বাবা,রাজা হও।" অজয়কে সেদিন এত ভাল লেগেছিল বাপ্পার, খানিকটা যেন শ্রদ্ধাও এসে গিয়েছিল। ঈষৎ ঝুঁকে পড়ে, একটা অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে কিছু চাল আর কটা কয়েন নিয়ে, বুড়োটার হেঁটে যাবার দৃশ্যটা আজও মনে পড়ে বাপ্পার। কিন্তু আজ? আজ এ কি হল! বারবারই ওর মনে হচ্ছিল সবাই ভুল করছে, সবাই ভুল বুঝছে ,বাবাও ভুল করল । বাবা ভাল করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখলই না, ওর সব কথাও শুনল না, তাহলেই বুঝতে পারত, ছেলেটার সত্যি কথাই বলছে। স্কুলের সামনের বুড়ো ভিখারিটা তো তবু কিছু পেয়েছিল, কিন্তু ছেলেটার হাতে তো কোন কাঁসি দেখেনি ,ও তো তবে কিছুই ভিক্ষে পায়নি! এসব ভাবতে ভাবতে বাবার সঙ্গে বাপ্পা একসময় বাড়ি এসে গেল । পরদিন ভোরবেলা, ঘুম ভেঙে গেল একদল কাকের চিৎকারে। তড়িঘড়ি করে ঘুম চোখেই ছাদে উঠে গেল বাপ্পা। দেখল ডিস এন্টেনা আর কেবলের তারে পা আটকে, একটা কাক খুব ছটফট করছে, কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না। আর একদল কাক, তার জন্য খুব ব্যস্ত হয়ে 'কা' 'কা' করে ডাকছে আর ওড়াউড়ি করছে , কখনো মাথার ওপর উড়ছে, কখনো এন্টেনায় বসছে, আবার কখনো এধারে ওধারে উড়ে যাচ্ছে, এইসব চলছে। বাপ্পা আসতে ওকে দেখে কাকগুলোর চেঁচামেচি আরও যেন বেড়ে গেল, যেন বাপ্পাকে ওরা বলছে "একটু হেল্প কর, ভাই।" কিন্তু এখন সদর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে, তড়িৎ কাকুদের বাড়ি যাওয়া যাবে না, বকুনি খেতে হবে। তারপর আবার মনে হচ্ছে, তড়িৎ কাকুরা বোধহয় আজ বাড়িতেই নেই। সুতরাং নিরুপায় হয়ে বাপ্পা ওদের কান্ড কারখানাই দেখতে লাগল। দেখে সঙ্গীকে বাঁচানোর জন্য কাকগুলোর কি ভীষণ উৎসাহ-উদ্দীপনা। তারের ওপর বসা দু'চারটে কাকের এলোমেলো ওড়াউড়ি আর পা আটকে যাওয়া কাকটার আপ্রাণ চেষ্টায়, ভীষণ ভাবে দুলতে লাগল তারগুলো। আর তাতেই একসময় কিভাবে যেন কাকটার পা-ও মুক্ত হয়ে গেল ঐ তারের ফাঁস থেকে। কাকটা মুক্তি পেয়ে ,খানিকটা উড়ে অন্য একটা বাড়ির পাঁচিলের ওপর বসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। ধীরে ধীরে চেঁচামেচি,ওড়াউড়ি সব খানিকটা শান্ত হয়ে গেল। ওদিকে আরেক বিপদ, মা খুব রেগে গিয়ে নীচ থেকে চেঁচাচ্ছে। ভোরবেলা উঠেই দাঁত না মেজে, ছাদে উঠে গেছে বাপ্পা, আর এতক্ষণ সময় ফালতু নষ্ট করেছে বলে। মার গলাটা শুনতে ভাল লাগছে না, সিঁড়ি দিয়ে চটপট নেমে আসল ও। সেদিন টুথ ব্রাশে পেস্ট লাগাতে লাগাতে বাপ্পা ভাবছিল, আচ্ছা একটা কাক বিপদে পড়ায় বাকি সব কাক ছুটে সাহায্য করতে আসতে পারে, কিন্তু মানুষ বিপদে পড়লে লোকে একটা টাকা দিয়েও সাহায্য করতে চায় না কেন? দাঁত মাজতে গিয়ে বাপ্পার পেস্টটাকে কেমন যেন তেঁতো মনে হল। বাপ্পা তখনই ঠিক করল, ওর জমানো সব টাকাগুলো নিয়ে কাল আর একবার বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়ে খুঁজে দেখবে, গরিব ছেলেটাকে পাওয়া যায় কিনা। ওর মন বলছিল, নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।

21 August 2019

রুট থ্রি

পাড়ায় রবিবারের ক্যারামের আসর,ডবলসে খেলা চলছে।দু’গেম আমরা হেরেছি,এবারেরটা জিততেই হবে।নিলে ম্যাচ হারলে,পরের ছ’মাস সর্বত্র আওয়াজ খাওয়া বাঁধা। হঠাৎ আমার পার্টনার শুভদার মোবাইলে একটা ফোন এল। শুভদা একটু আড়ালে সরে গিয়ে কি সব কথাবার্তা চালাতে লাগল, দু-একবার “কি বলছেন বুঝতে পারছি না” কথাটাও শুনলুম যেন ।সে সবে বেশি নজর ছিলনা, তখন আমার দান। ঘুরে যখন আবার শুভদার দান এল তখনও ও ফোনে বোঝাতে ব্যস্ত, “আপনি কি চাইছেন ,ঠিক বুঝতে পারছি না”। নাড়ু একটু  গুন্ডা প্রকৃতির,রেগে বলল “এই শুভদা কার ফোন?কি বলছে?” শুভদা হাতদুটো উল্টে বোঝাল ও কিছুই বুঝছে না, আর সঙ্গে সঙ্গে নাড়ুর হাতে ফোনটা চালান করে দিল। নাড়ু ফোনটা কানে দিয়ে,”কে বে?” বলতে গিয়েও পুরো শেষ করে উঠতে পারল না,বরং ওর চোখ মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। কিন্তু তার পরেই উত্তর দিতে গিয়ে তোতলাতে লাগল, “না মানে আপনি ঠিক কা-কাকে চাইছেন ব-ব-বলুনতো?” মনে হল,ওপাশ থেকে দুর্বোধ্য কিছু শুনে,সেসব ওর মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ও এবার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে মুক্তি পেল। ততক্ষণে শুভদাকে “কে রে?কে ফোন করেছে?”, জিজ্ঞেস করতে শুভদা বলেছে “আমি চিনিনা ,রং নাম্বার হবে ।“ যাইহোক আমি উৎসাহ ভরে ফোনটা কানে নিতেই শুনলুম, সুন্দর নারীকন্ঠে, সুমিষ্ট টানে কেউ তখনও বলে চলেছে “এটাও জানেন না?” আমি তো আগের কথা কিছুই শুনিনি।  মেয়েটিকে বললুম, “কি বলছেন আরেকবার বলবেন কি?” ওপাশ থেকে রেগেমেগে, কাটা কাটা কটা কথা কানে এল, “কি আবার বলব, কতবার তো বললাম, রুট থ্রির ভ্যালুটা কি হবে, বলে দিন না,মনে আসছে না! আমার কাছে ক্যালকুলেটর নেই।“ আমি তো হতভম্ব হয়ে গেলুম। অজানা অচেনা কেউ ফোন করে রুট থ্রির ভ্যালু, এই ক্যারামের আসরে জিজ্ঞেস করতে পারে, এটা আমার ধারনারও বাইরে ছিল। যাই হোক   ভ্যালুটা মুখস্থ ছিল, ফট করে বলে দিলুম, ওয়ান পয়েন্ট সেভেন থ্রি টু।শুনে মেয়েটি উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল, খুশিতে ডগমগ হয়ে বলেই ফেলল,” ওহ, বাঁচালেন। থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ, আই লাভ ইউ সুইটহার্ট ,মুয়াঃ।“ শেষে একটা চুমুর শব্দ এবং তৎক্ষণাৎ ফোনটা কেটে গেল। বলাবাহুল্য, শেষের কথাগুলো আর চুমুর শব্দটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল। সবার কাছে হিরো বনে গেলুম, যারা সঠিক উত্তর দিতে পারেনি তারা আমার উপর অযথা ঈর্ষায় জ্বলেপুড়ে মরতে লাগল। নাড়ুতো রেগেমেগে বলেই ফেলল “ওঃ, এই ব্যাপার, এ তো আমিও জানতাম, খুব ক্রেডিট নিলি, না?” বলে আমার দিকে কটমট করে তাকাতে লাগল। আমি তো এদিকে তখন হাওয়ায় ভাসছি ,চোখ মুখ লাল ।কাউকে কিছু বলতেও পারছি না,মেয়েটা আমাকে কি বলেছে। বললে, মেরে হয়ত আমারই চামড়া গুটোনো হবে। ওদিকে মনের  খুশিটাও চেপে রাখতে পারছি না,কলেজের ভাইভাতে এক্সটারনালের প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিয়ে কখনও এরকম নির্মল আনন্দ হয়নি,হবেও না। ক্যারাম খেলা তো মাথায় উঠল, সহজ শটগুলোও মিস করে ফেললুম। ম্যাচ  গোহারান  হেরে, শুভদার গালাগাল শুনতে হল,কারও কারও বক্রোক্তিও।
খেলা শেষে ক্যারামবোর্ড তুলে সবাই যখন যে যার বাড়ি যাচ্ছে, চুপি চুপি শুভদাকে বললুম, “শুভদা ,কার ফোন এসেছিল গো, একটু নাম্বারটা দাও না!” শুভদা এমনিতেই এইরকম ম্যাচ হেরে চটে ছিল।আমার উৎসাহ দেখে তিরিক্ষি মুডে বলল ,”কেন রে, কি করবি নাম্বার নিয়ে ?কাকুকে বলব নাকি?” এরপর আর কথা চলে না। বিরস বদনে বাড়ি ফিরে এলুম। কিন্তু তখনও কানে সেই কথাগুলো, মিষ্টি সুরের মতো বাজছিল “আই লাভ ইউ সুইটহার্ট,মুয়াঃ।“

15 August 2019

ইতি বন্যা

প্রিয় নির্ঝর, (২৪ শে এপ্রিল) তোমার সঙ্গে কথা কি দিয়ে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। সেদিন তুমি প্রথম আমাকে ভালবাসা জানালে, আমি কলেজ থেকে ফেরার পথে, সারাটা রাস্তা বাসে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তোমার কথাই ভাবছিলাম, কখন যে বাড়ির স্টপ এসে গেছে খেয়ালই নেই। কিন্তু তোমার কথা কি যে ভাবছিলাম, সেটা আমি নিজেও জানিনা ।আমি সত্যিই বোধহয় তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম। তোমার মুখটাই খালি ভাবি, সবসময় সেটা আমার চোখের সামনে ভাসছে। কখন সেই ভাসমান অস্পষ্ট মুখটা আমার সামনে এসে স্থির, স্পষ্ট হয়ে আমার সঙ্গে কথা বলবে,সেই অপেক্ষাতেই আছি। আনমনে বসে বসে কখনও আমি নিজেই জানিনা, কোন রাজ্যে হারিয়ে যাই।অথচ ইচ্ছে না থাকলেও আবার সেই স্বপ্ন রাজ্য থেকে বাস্তবে ফিরে আসতেই হয়। তুমি জানতে চেয়েছিলে আমার হবি কি। কি জান? তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা। তুমি বল, 'হাঁ করে তাকিয়ে দেখার মত কি আছে?' কিন্তু তুমি জানো না ,যদি তুমি আমার চোখ দুটো দিয়ে নিজেকে দেখতে, তবে অনুভব করতে পারতে। এটা বলে বোঝানো যায় না। তোমার সঙ্গে থাকলে আমি নিজেই যেন কোথায় হারিয়ে যাই। সময়, অসময় কিছুই মানতে ইচ্ছে করে না। মনে হয় ঘড়ির কাঁটা যদি একই জায়গায় থেমে থাকত, তবে বড় ভালো হত। কিন্তু ঘড়ি তো আর কোনদিন কারো সাথে প্রেম করেনি ,তাই সে আর কি বুঝবে? সেই জন্য নিরুপায় ভাবেই তোমাকে বিদায় দিয়ে বাড়ি চলে আসতে হয়। সেই সময়টা আমার খুব কষ্ট হয়, মনে হয় ইস কাল যদি আবার দেখা হত, কি ভালই না হত! কি ন্তু হয় না। বাড়ি ফিরে মনে হয়, কেন তুমি আমার সামনে নেই? কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে হয়। আবার কবে তোমাকে দেখতে পাব, তখন থেকেই সেই অপেক্ষা শুরু হয়ে যায়। সেদিন তুমি বাইরে চাকরি নিয়ে চলে যাবে শুনে, জানো তো আমার বুকের ভেতরে যেন নিমেষে একটা কালবৈশাখী ঝড় ছুটে চলে গেল। সেই ঝড়ে সব কিছু যেন তছনছ হয়ে গেল। অবশ্য কিছুক্ষণ পরেই সেই ঝড় থেমে গেল, আমি আবার নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করলাম। আমার চোখের সামনে যে মুখটা সব সময় আনাগোনা করছে ,সেই মুখটাই আমাকে সব ঝড় সামলে উঠতে সাহায্য করেছে ।সেটা যে কার ,তা নিশ্চয়ই তোমাকে আর বলে দিতে হবে না। কেন যে এরকমটা হয়, কে জানে? তুমি জানো, সেদিন বাড়ি ফেরার পর থেকে সব সময় তোমার শরীরের একটা গন্ধ, নিজের মধ্যে অনুভব করছি। এই গন্ধটা আমায় সব সময় মনে করিয়ে দিচ্ছে তোমার অস্তিত্ব।তুমি যেন আমার আশেপাশেই লুকিয়ে আছ, তুমি যেন আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছ। এই অনুভূতিটা আমাকে একটা দারুন, পাগল করে দেওয়া আবেশ আর আনন্দ এনে দেয়। তোমাকে ছেড়ে থাকতে ইচ্ছে করে না তো, মনে হয় সব সময় শুধু তোমার পাশেই বসে থাকি। কিন্তু উপায় কি বল? অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোমাকে ছেড়ে ফিরতি বাসে উঠে পড়তে হয়। ( ১৭ই মে) যদি তুমি রাগ কর, তাহলে তুমিই বলে দিও সেই রাগ ভাঙানোর জন্য কি করতে হবে। আমি সেটাই করব। সেদিন তোমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হল, ঐ সময়টা যে আমার কি বিচ্ছিরি ভাবে কেটেছে, তা তুমি যদি বুঝতে। তোমার জন্য অপলক দৃষ্টিতে অপেক্ষা করতে করতে আমার এই চোখ দুটোর ভবিষ্যতে যে কি অবস্থা হবে, তা আমি নিজেই ভেবে পাচ্ছি না। সেদিন তোমার ওপর খুব রাগ হয়েছিল, ভেবেছিলাম আর কথা বলব না। মনের ভেতর অনেক কথা ছুটোছুটি করতে করতে, একটা বড় অভিমান জমাট বেঁধে উঠছিল। কিন্তু কি আশ্চর্য, তোমাকে দেখামাত্রই সেই সব রাগ-অভিমান কোথায় যে চলে গেল, আমি জানতেও পারলাম না। আচ্ছা, এরকম কেন হয় বলতো? সেদিন তুমি যখন বললে, বাইরে যাবে ক'দিনের জন্য, আমার মনের ভেতরটা যে কি একটা হয়ে গেল, সেটা আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না। তোমার সঙ্গে দেখা করে বাড়ি এসে, মনটা খুব খারাপ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আবার কবে দেখা হবে। আজকে আরো একটু বেশিক্ষণ তোমার কাছে থাকলে পারতাম, কেন থাকলাম না! মনে হল রবিবারের পর যদি শুক্রবার হত, তবে খুব ভাল হত। তোমার সঙ্গে দেখা হবে না ,এটা যেন আমি ভাবতেই পারি না। অবশ্য সবকিছু তো আমার ভাললাগার ওপর চলবে না, যেটা প্রয়োজন, সেটা করতেই হবে। এই কটা দিন আমার কাছে খুব দীর্ঘ সময় বলে মনে হয়েছে। কলেজের গেটের কাছে বাঁ ধারে, ইউক্যালিপটাস গাছটার নীচে তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে। আমিও গেটের বাইরে এসেই তোমাকে সেখানে খুঁজতাম। অভ্যাসবশত সেদিনও তেমনই খুঁজেছিলাম, কিন্তু মনে পড়ে গেল আজ যে তোমার সঙ্গে দেখা হবে না। তুমি অনেক দৃরে আছ। তুমি না থাকলে আমার সব কিছু কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে, মনটা বাইরে ছুটে বেরিয়ে আসতে চায়, আর কোথা থেকে চোখের কোণে এক ফোঁটা জল জমে। অবশ্য তোমাকে না দেখলেও আমার মনের আয়নায় তোমার ছবি সব সময় ঘোরাফেরা করছে ।তুমি আমার সামনে না থাকলেও, প্রতিনিয়ত তোমার ছবিটা আমার কাছেই থাকে। তোমাকে আমি যতটা ভালোবাসি, আমার মনের আয়নার সেই ছবিটাকেও আমি ততটাই ভালোবাসি। সে তো সবসময় আমার কাছে থাকে, তাই না? সুখের দিনে যেমন জড়িয়ে ধরে, দুঃখ কষ্টেও ঠিক তেমনই ভরসা যোগায়। জানো তো, তুমি যদি চুপচাপ কোন কথা না বলেও, শুধু আমার পাশে বসে থাক, সেটাও আমার কাছে ভীষণ আনন্দের হয়। তুমি আমার পাশে থাকলে দুনিয়ায় কোন কিছুই আর একঘেয়ে বলে মনে হয় না। তুমি যখন আমার দুষ্টুমিতে রেগে গিয়ে, মাঝে মাঝে বল, আগে যদি জানতে তাহলে আর আমার পাল্লায় পড়তে না, আমার মনে ভয় হয়, তুমি কথাগুলো সত্যি সত্যি তোমার মন থেকে বলছ না তো? (২রা জুন) মাঝে মাঝে দেখি, সমাজের মেকি নিয়মের বাঁধনগুলো আমাদের সুন্দর সম্পর্কে এক চরম অনিশ্চয়তার জন্ম দেয়। সেসব দেখে লজ্জা নয়, ভীষণ দুঃখ হয়। সেই দুঃখের কথা ভেবে কি লাভ? যা হবে, দেখা যাবে। সেদিকে না তাকিয়ে, বরং চলো, আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথের দিকে তাকাই। যে পথ কোন একদিন আমাদের দুঃখ নিশ্চয়ই দূর করতে পারবে। আমাদের দেখা হবার থেকেও তোমার সেটেলমেন্টটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি এমন সময় আসে, যখন তোমাকে একদিনও দেখতে পাব না, তখনও তো আমাকে দিনগুলো কাটাতে হবে। তাই এখন থেকেই অল্প অল্প করে সহ্য করার ক্ষমতাটা বাড়াতে চাইছি, যাতে সেই দুঃসময়ে এটা আমাকে সাহায্য করে। অবশ্য আমি জানি, সেই দুঃখ আমাকে কোনদিনও পেতে হবে না, তুমি আছ তো। তুমি আমাকে কতটা ভালবাসো, তার প্রমাণ আমি কোনদিনও তোমার থেকে চাইনি। শুধু তুমি মুখে যতটুকু বল, সেটাই আমার কাছে সব। ক'দিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি বলে, সময়টা যে কিভাবে কেটেছে, কি বলব! যেন আর কাটতেই চাইছে না। মনে হচ্ছে, এখন যদি পাঁচ মিনিটের জন্যও তোমাকে সামনে পেতাম, তাহলে খুব ভাল হত। আমার মনে হচ্ছে আমার বুকের ভেতর অনেক কথা জমা হয়ে রয়েছে, যেগুলো তোমাকে এখনই জানাতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু কি জানো, যখনই তুমি আমার সামনে আস, তখন আর বলার মত কিছুই পাই না। এই যে বাজে দিনগুলো কাটছে, এগুলো আবার সুন্দর করে দিতে পার একমাত্র তুমিই, যেদিন তুমি আমার সামনে আসবে। সেই দিনটাকে তাড়াতাড়ি আমার কাছে পাঠিয়ে দাও না, আমি যে অপেক্ষা করে বসে আছি। আজ আর কোন কিছুতেই মন বসছে না, শুধু তোমারই কথা ভাবছি। মনটা শান্ত করার জন্য শেষ পর্যন্ত তোমার ছবি দেখি, তোমার লেখাই পড়ি। তারপর দেখি তো এই মন বাধ্য মেয়ের মত আমার কথা শোনে কিনা। (১৩ই জুলাই) তোমাকে ছেড়ে আসতে খুবই খারাপ লাগছিল সেদিন, মন বলছিল আবার কবে দেখা হবে, কে জানে? এখন তো সত্যিই তোমার সঙ্গে আর বেশি থাকা হবে না, তুমি তো সকালে বেরিয়ে যাবে আর ফিরবে অনেক রাতে, তারপর ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়বে। আমার কথা হয়তো আর মনেই পড়বে না। আমি কিন্তু আমার ঘরে বসে বসে, তোমার কথাই মনে মনে ভাববো, আর সপ্তাহের সেই ছুটির দিনটার অপেক্ষায় থাকব, আর তোমার দেওয়া সেই মধুর স্পর্শ সারাদিন অনুভব করব। এছাড়া আমার আর কিই বা করার আছে, বল? তুমি চাকরি পেয়েছ ভেবে খুবই আনন্দ হয়েছিল। সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না ।আবার অন্যদিকে সেই রকমই কষ্ট পেয়েছিলাম, কারণ তোমার সঙ্গে আর বেশি দেখা হবে না। অবশ্য এই কষ্টটা সহ্য করা যায় ,কারণ এর মধ্যে এক নতুন দিনের আশা লুকিয়ে আছে। তুমি বলেছিলে, কাজের শেষে বাড়ি ফিরে তুমি দেখবে ,আমার দুটো চোখ তোমার অপেক্ষায় রয়েছে। আপাতত এটা সম্ভব না হলেও, আমার এই চোখদুটো অপেক্ষা করে থাকবে ,সারা সপ্তাহের শেষে ক্লান্ত অবিশ্রান্ত সেই মানুষটার জন্য ,যাকে আমি ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি ,ভীষণ ভীষণ চাই। প্রথম প্রথম তোমায় না পেলে, খুব খারাপ লাগবে, তারপর ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে ।তোমার বুকের মধ্যে থাকতে পারলে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু একটু খারাপ লাগে যে তোমার মুখটা দেখতে পাচ্ছি না। তাই হাঁপিয়ে উঠি, আর তোমার অজান্তেই তোমার সামনে এসে দাঁড়াই। যদি এমনটা হত যে, তোমার বুকের মধ্যে থেকেও একই সঙ্গে তোমার মুখটাও দেখা যাবে, তাহলে সত্যি বলছি আমি ঐ সুন্দর জায়গাটা ছেড়ে আর বাইরে বেরিয়ে আসতাম না ।আমার এই ইচ্ছেটা জানিনা ,কবে সফল হবে! তুমি সেদিন খুব সুন্দর চাঁদ দেখে আমার কথা ভেবেছিলে, জানোতো ওই চাঁদটা আমিই ছিলাম ।তোমাকে দেখব বলে এসেছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খুব একটা পাত্তাই দিলে না, তাই অনেকটা রাগ করে চলে গেলাম। তুমি কিন্তু তোমার কারখানার ঐ যন্ত্রের পাল্লায় পড়ে, চাঁদ দেখতে ভুলে যেওনা । আসলে ঐ চাঁদই আমার বার্তাবাহক হয়ে, তোমার কাছে আসে, সে আমি যতই দূরে থাকি না কেন। তোমাকে বেশি দিন না দেখলে মনের ভেতরটা কেমন যেন হাঁসফাঁস করতে থাকে, তুমি যখন আমাকে নিয়ে ভাবতে থাক তখন আমার ভীষণ ভাল লাগে, মনে হয় মা-বাবার পরো আরো কেউ একজন আছে যে আমাকে ভালবাসে আর আমার কথা ভীষণ ভাবে। কিন্তু তাই বলে তুমি আমার জন্য দুশ্চিন্তা কোরো না। আমি ঠিক আছি, তোমার জন্যই ঠিক আছি। (১৭ই আগষ্ট) তুমি সেদিন ইচ্ছে করে আমার সঙ্গে দেখা করনি ,আমার কাছে আসনি ।আমি ভেবেছিলাম বোধ হয় তোমার কোন অসুবিধা আছে। কিন্তু তুমি যে আমাকে ইচ্ছা করে এইভাবে কষ্ট দিতে পার, এ কথা ভাবলেই আমার মনের ভেতরে কি যে হয়ে যাচ্ছে, সেটা কেউ অনুভব করতে পারবে না। তোমার থেকে সাময়িক দূরত্ব সহ্য করতে পারলেও, তোমার কাছ থেকে চিরদিনের মত দূরে সরে যাওয়াটা আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারব না। আর যাতে দূরে সরে যেতে না হয়, তুমি তারই চেষ্টা করবে, এটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি তো আমাকে শাস্তি দিচ্ছ, অনেক দূরের কেউ হয়ে গিয়েছ। সবাই বলে কাঁদলে মন হালকা হয়, কিন্তু আমার মন কিভাবে হালকা হবে ,আমি নিজেই জানিনা। তুমি ঠিকই বল, আমি যা কিছু করি, সব চূড়ান্ত এবং অসম্ভব। আসলে আমি নিজেই একটা পাগলী তো, তাই। আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি সফল হয়েছ, এবার তো তোমার শান্তি। যাক, এ কথা আমি এখন বুঝতে পেরেছি যে, আমি তোমাকে চূড়ান্ত এবং অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছি। মনে হচ্ছে তুমি আমাকে ভুলে থাকতে পারলেও, আমি তোমাকে কখনো ভুলে থাকতে পারব না ,চেষ্টা করেও পারব না। আর ভুলতে চাইও না। তাই তুমি যেন আর আমাকে এরকম কষ্ট দিও না। আমার কাছের চেনা মানুষটাকে, আমি আবার ফিরে পেতে চাই, কি ফিরে আসবে তো? আমার অস্থির মনের কষ্টের কথা, আমি তোমাকে বলব না তো, আর কাকে বলব বল? সে তুমি আমাকে যত দূরের লোক ভাবার চেষ্টাই কর না কেন। আমি যে তোমাকে আমার ভীষণ কাছের লোক ভাবি। তুমিও আমার মন রাখার জন্য কখনো কিছু বোলো না, তোমার মনে সত্যিই যা আছে, সেটাই বোলো। আমার মনে হয়, তুমি যেন আর আগের মত নেই। তুমি একবার শুধু মন থেকে বল, তুমি আমাকে ভালবাসো, তাহলেই হবে। অনিশ্চয়তা তো জীবনে আছেই, তার পেছনে আমরা হয়তো আগে ছুটছিলাম, আর এখন না হয় হাঁটছি। অবশ্য সে তো তোমার ইচ্ছেতেই। আমি জানি, সেই অনিশ্চয়তা আছে বা থাকবে,তবু মনের কোণে কোণে সব সময় তুমিই জেগে আছ। তোমার সঙ্গে যখন দেখা না হয়, খালি দিন গুনতে থাকি, দিনের পর দিন। আবার কবে দেখা হবে। তোমাকে হারানোর কথা ভাবলেই মনে নানা দুশ্চিন্তা চলে আসে, তারপর সেই চিন্তায় আমার আর কিছুই ভাল লাগেনা। প্লিজ, তুমি আমার সেই চেনা মানুষটা হয়ে ফিরে এসো, হারিয়ে যেওনা গো, সেই আগের মত ফিরে এসো না! জানো, সেদিন ফোনে, বাড়িতে মাকে বললাম, মা তোমার কাছে যাব। মা তখন বলল, চলে আয়। তখনই আমার মনে কি যে হল, কে জানে? আমার মনে হল, আমি তোমাকে ছেড়ে, তোমাকে না দেখে, থাকব কি করে ?জানো তো, মাঝে মাঝে তোমার কথা মনে হলে, মনটা এত খারাপ হয়ে যায়, তখন আর আমার কোনকিছুই ভালো লাগে না। তখন শুধু তোমার মুখটাই আমার মন খুঁজতে থাকে। (২৮শে সেপ্টেম্বর) তুমি নিজেই বল ,আমার কষ্ট তোমার সইবে না ,আর তুমিই আমাকে এমন ভাবে কষ্ট দিচ্ছ! আমার সাথে দেখা করনি, কিন্তু ফোন তো করতে পারতে! আর তুমি জানো, তোমার ফোনের অপেক্ষায় আমি কিভাবে বসে থাকি। তবু কেন তুমি ফোন করলে না? তুমি কি আবার আগের মত আমাকে শাস্তি দিচ্ছ? আসলে তোমাকে ভুলে যাবার কথা আমি ভাবতেই পারি না ।আমি জানি তোমাকে হয়তো কোনদিন ভুলতেই হবে, কিন্তু সেটা আমার মন কখনোই অত সহজে মেনে নিতে পারবে না। আর তোমাকে ভুল বুঝতে, আমার মন কোন সময় চায় না, তোমাকে যে আমি ভীষণ বিশ্বাস করি। কিন্তু তুমি? তুমি কেন এত সহজে আমাকে ভুল বুঝে, আমার ওপর রেগে যাও? সেটা যে আমাকে ভীষণ ভীষণ কষ্ট দেয়, তুমি কেন বোঝ না? আমিও হয়তো কখনো এমন কোন কথা বলে ফেলি, যাতে তুমি কষ্ট পাও, কিন্তু আমি সেটা না বুঝে বলি। আমি যখন পরে সেটা বুঝতে পারি, তখন আমারও ভীষণ কষ্ট হয়, আর নিজের উপরই নিজের রাগ হয়। কিন্তু তুমি কি আমাকে একটুও মানিয়ে নিতে পারো না? জানো, এই কদিন আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি? কাউকে ভালবাসলে হয়ত এরকমই কষ্ট পেতে হয় ।আরো বেশি কষ্ট কেন পাচ্ছি জানো, ভয় হচ্ছে তুমি হয়ত সত্যি সত্যি আমার কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে হারিয়ে যাচ্ছ। সত্যিই কি তুমি হারিয়ে যাচ্ছ? তুমি যদি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো, তবে আর এমন ভাবে কষ্ট দিওনা। যদি কষ্ট আমাকে পেতেই হয়, তবে একেবারেই পাব। এরকম বারবার কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি এভাবে আমাকে ভুলে চলে যেওনা, আমার কি কোন মূল্যই নেই তোমার কাছে? অথচ, আমি যে তোমার কথা ছাড়া আর কারো কথা ভাবতেই পারি না। তোমার সঙ্গে অনেকদিন দেখা হবে না, এ কথা ভাবতেই ভীষণ খারাপ লাগছে ।একদিকে অনেকদিন পর বাড়ি যাব ভেবে আনন্দ হচ্ছে, আবার অন্যদিকে তোমাকে ছেড়ে থাকতে হবে ভেবে মন খারাপ লাগছে। কি করে যে এতগুলো দিন তোমাকে না দেখে কাটাব, ভাবতেই পারছি না । অনেকদিন পর মাকে দেখব, বাবাকে দেখব,অনেক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে, সেটা ভেবেই মনটা এখনই ছুটে চলে যাচ্ছে, কিন্তু ওখানে গিয়ে পৌঁছানোর আগেই আবার ফিরে আসছে, কারন কি জান? মনের সবচেয়ে বড় অংশটাই যে তোমার কাছে পড়ে আছে, তাই আমি ওখানে থাকলেও আমার মন পড়ে থাকবে এখানেই, তোমার কাছে। তুমি তো বললে পাঁচ বছর পরে আমি তোমাকে সব সময়ের জন্য পাব ,কিন্তু আমার যে একটা ভয় হচ্ছে, আমার বাড়ির লোক কি আমাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে দেবে? হয়তো না, বড়জোর তিন কি চার বছর হতে পারে ,তারপর কি হবে ?অবশ্য তুমি তো তোমার উত্তর বলেই দিয়েছ, অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে। কিন্তু আমি তো তা পারবো না। অন্য কাউকে বিয়ে করব বলে তো আর তোমাকে ভালোবাসিনি। কিন্তু তোমার কাছে কি এ ছাড়া অন্য আর কোন উপায় নেই? চার বছরের মধ্যে তুমি কি কিছুই করতে পারবে না? কিছু একটা করো প্লিজ, যাতে তোমাকে হারাতে না হয় । তুমি যেমন কি সুন্দর, নির্বিকার ভাবে বলে দাও, অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে ,আমি কিন্তু সেটা বলতে পারি না বা ভাবতেও পারি না। কেন সেটা আমি নিজেও জানিনা। আমি জানি তো, আমার চেয়ে অনেক ভাল মেয়ে তুমি পাবে, কিন্তু তবুও এই মন মানতে চায় না। আসলে খুব স্বার্থপর কিনা, নিজের ছাড়া অন্য আর কারো কথা ভাবতে পারি না। জানো তো, আজকাল আমার না তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে হয়। মনে হয়, তুমি যদি আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে তোমার বুকে একটু জড়িয়ে ধরতে, ঠিক আগের মত। কিন্তু তুমি তা কর না। আমি তো তোমাকে এত দূরে সরে যাবার কথা বলিনি, আমি অতিরিক্ত কিছু পছন্দ করি না ঠিকই, কিন্তু তাই বলে তুমি আমাকে ছোঁবেই না, সেটা তো কখনো বলিনি। আর তুমি তো অতিরিক্ত কিছু কর না। আমি জানি তুমি অন্যদের মত নও, সেই জন্যই তো তোমাকে ভালবেসেছি। আমি তোমার মত কবিতা লিখে, অত সুন্দর ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি না। আমি খুব সাধারণ মেয়ে, জীবনটাকেও সাধারণভাবে দেখি। তার গভীরে গিয়ে না বলা কোন কথা আমি কোনদিন খুঁজে পাইনি। আমার শুধু একটাই ভয়, তোমাকে মনে পড়লে কি সারাজীবন শুধু বুকে আর আশেপাশে খুজে বেড়াতে হবে? আমি তো তোমাকে সব সময় আমার চোখের সামনে দেখতে চাই। (১৫ই অক্টোবর) তুমি যত সহজে বলেছ, তোমাকে ভুলে যেতে, সেটা আমার পক্ষে অতটা সহজ নয়। আসলে আমি তো তোমাকে ভুলে যাবার মনোভাব নিয়ে ,তোমাকে ভালবাসিনি। কখনো একথা মনে স্থান দিইনি, ভেবেছি তুমি আমার। আর এও মেনে নিয়েছি, ভাল যখন বেসেছি ,তখন কষ্ট পেতেই হবে। হাজার চেষ্টা করলেও সেই কষ্ট কম হবে না। তোমার থেকে আমি জোর করে কখনো কিছু পেতে চাইনি, কোন দাবীও করিনি। আমি ভাবছি ,তাহলে তুমি হঠাৎ কারও জীবন নষ্টের কথা ভাবছ কেন? যার জীবন, তাকেই ভাবতে দাও না। তুমি কি অনেক পাল্টে গেছ? তুমি কি আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছ? আমি কিন্তু তোমাকে আমার অনেক কাছের মানুষ হিসেবে পেতে চাই, অবশ্য সেটা জোর করে নয় ।অপেক্ষার ফল কি হবে সেটা আমিও জানি না,তুমিও জানো না। এটা তো নতুন নয় ,এটা প্রথম দিন থেকেই আমি জানি। তাই বলে, ভয় পেয়ে, পিছনে ফিরে যাব ? এইভাবে হার মেনে নেব? আমার মনে অনেক কষ্ট উঠে আসছে, বুক ফেটে কান্না উঠে আসছে ।সেই কান্না কাকে দেব? সত্যি তোমাকে ভোলার মতো পরিস্থিতি এলে, অবশ্যই কষ্ট সহ্য করে ভোলার চেষ্টা করব, কিন্তু তুমি আমাকে ভুল বুঝো না কখনো। তুমি বলতে, আমার কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারবে না। তাই তুমি ভুল বুঝলে আমি ভীষণ কষ্ট পাব। অনেক উল্টোপাল্টা কথা মাথায় আসছে,কেন কে জানে? কিন্তু কাউকে তো বলতে হবে। তোমাকে ছাড়া আর কাকে বলব? এত দিন পেরিয়ে গেল তবুও আমি তোমাকে সঠিকভাবে চিনতে পারলাম না। তুমি মাঝে মাঝে এমন অচেনা হয়ে যাও, যে তুমি যে আমার ,সেটা ভাবতেই আমার কেমন যেন অবাক লাগে। আমি তোমার থেকে বেশি ভালবাসা চাই না, আগে যেমনটি ছিলে, তেমনটি হলেই হবে। তখন তো তোমাকে দেখতে পেতাম, কাছে পেতাম। আর এখন তুমি কেমন যেন আমাকে এড়িয়ে যেতে চাও। আমি বুঝতে পারছি না, আমি কি এমন দোষ করেছি যার শাস্তি আমাকে এইভাবে পেতে হচ্ছে! যদি শাস্তি দিতেই হয় তবে একেবারেই দিয়ে দাও। জানো তো, আমারও একটা মন আছে। এইভাবে আমার মনটাকে বারবার ভেঙে দিও না, পরে হয়তো কোনদিন আর জোড়াই লাগবে না। আমি তো তোমাকে ভালোবাসতেই চেয়েছিলাম আর সারা জীবন তোমার ভালবাসা পেতেই চেয়েছিলাম ।তোমার যদি সম্মতি না থাকে ,স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দাও। সবার তো আর সব আশা পুরন হয় না !তাহলেও,আমি কিন্তু তোমাকেই ভালবাসব। যদি তুমি আমাকে ভুলে যেতে বল, তখন প্রচন্ড একটা ঝড় আমার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে জানি, সেই ঝড় যদি সহ্য করতে পারলাম তো ভাল, আর যদি না পারি, তাতে তোমার কোন দোষ নেই, সে আমারই অক্ষমতা। বুঝতেই পারছি, তোমার কাছে আমার চাওয়া পাওয়ার কোন দাম নেই। তাইতো, আমি কে? একদিন দেখা হয়েছিল, এতদিন গল্প করেছ, ঘুরেছ, সেটাই যথেষ্ট,কি বল? (১৯শে নভেম্বর) তুমি তো সম্পর্ক শেষ করে দিতে চাইছ, আমি কিন্তু সেটা ভেবে প্রথম দিনে তোমার কাছে আসিনি। আসলে আমি তো তোমার কাছে বেশি কিছু চাইনি, একটু সময় শুধু, বিভিন্ন কাজের মধ্যে যতখানি সম্ভব হয়। আমাকে কি সত্যি সত্যি একেবারে ভুলে গেলে? তুমি আমাকে যা শাস্তি দিলে ,আশা করি আর কোন মেয়ে যেন এমন শাস্তি না পায় ।আমি তো সেই সব মেয়েদের মত সস্তা নই, তাই কষ্টটা বেশি পাই, সেরকম হলে তো আর কষ্ট পেতাম না। এখনো মনে হচ্ছে তুমি হয়তো আমাকে ভুলে যাবে না, কয়েকদিন আগের কথা ভেবেই এখনো মনে আশা হয়। আজ তোমার মুখটা বারবারই আমার সামনে ভেসে আসছে ,আমি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছি তুমি আমাকে ভুলে গেছ। আর কাউকে তো মনের কথা বলা যাবে না কোন দিন, তাই শেষ কথাগুলো তোমাকেই বলছি ।বুঝতে পারছি তুমি আমার কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে সরে যাচ্ছ, তাই তোমার সব কথা আমার একে একে মনে পড়ে যাচ্ছে, আমাদের আগের সেই সব সুন্দর দিনগুলো তো সহজে ভুলতে পারব না, সেগুলো বারবারই আমার মনকে খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ সবকিছুই ধীরে ধীরে ভুলে যায়, একটু সময় লাগে শুধু। সবাই কত প্রিয়জনদের হারায়, সাময়িকভাবে তারা হয়তো ভেঙে পড়ে, কিন্তু ক'দিন কেটে গেলে আবার তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। মাঝে মাঝে সেসব কথা যখন মনে হয়, তখন খারাপ লাগে ঠিকই, কিন্তু মানিয়ে নিতে বাধ্য হতে হয়। আমারও তেমনি হাজার খারাপ লাগলেও, মেনে নিতেই হবে। তুমি ভাবছ, আমি কিরকম, তোমার পেছনে লেগেই রয়েছি! তুমি তো ছেড়ে চলে যেতেই চাইছ, তাও আমি ছাড়তে চাইছি না। আসলে আগে তো কাউকে এভাবে ভালোবাসিনি আর ভালোবাসা কি জিনিস সেটা অনুভবও করিনি, তাই এই ভালোবাসা জিনিসটাকে মন থেকে সরিয়ে দিতে একটু কষ্টই হচ্ছে, প্রথম প্রেম তো। আমাদের আগের প্রত্যেকটা দিনের কথা এখন প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ছে আর দু চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসছে। সেই জল রোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। তুমি আবার ভেবোনা, আমি চোখের জলের কথা মনে করিয়ে দিয়ে, তোমাকে ফেরত আনার চেষ্টা করছি। আসলে এরপর তো আর কখনো তোমায় কিছু বলতে পারব না, তাই। সেসব দিন যে চলে গেছে, ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে, মেনে নেওয়া তো দূরের কথা। তবু, মেনে যে নিতেই হবে। (২রা ডিসেম্বর) তুমি ভাবছ, একে না করে দিলাম, তবুও কেন আমার পেছনে পড়ে আছে ।আসলে আমি যা কষ্ট পেলাম, সেটা তো আর কাউকে জানাতে পারব না, তাই যে কষ্ট দিল তাকেই বলছি। খুব আনন্দে তুমি এখন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছ ,তাই না? তোমাকে যে আমি বিরক্ত করেছি যার জন্য তুমি অশান্তিতে কষ্ট পেয়েছ, তার হাত থেকে তো এবার নিস্তার পেলে। সত্যি, তোমার আজ নিশ্চিন্ত হবারই সময়, তুমি সফল হলে। তুমি আজ যা করলে বা বললে, সেটা হয়ত আরো কয়েক মাস আগেও বলতে পারতে ,তখনই হয়ত বুঝতে পেরেছিলে আমি কেমন। আমাকে যে তোমার আর ভাল লাগে না সেটা তো তখন থেকেই শুরু, বুঝতে পেরেও হয়তো ভেবেছিলে আরো কয়েকটা মাস কাটিয়ে দিই না কেন, এরপর কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলে তো আর এমনিই দেখা হবে না। আমি দেখ কি বোকা, আমি বুঝতেই পারিনি যে আমার জন্য তুমি বিরক্ত,বীতশ্রদ্ধ হয়ে যাচ্ছ। আসলে খুব বোকার মতো ভালোবাসি তো, কখনো আগুপিছু ভাবিনি।আমি যে কোনদিন তোমার পছন্দের মত নই, হতেও পারব না, সেটা বোঝার সাধ্য কোথায় আমার ?যা হোক,এবার যাকে পছন্দ করবে সে নিশ্চয়ই তোমার উপযুক্ত হবে, তোমাকে মানিয়ে নিতে পারবে। আমি তো জানি, আমি কোন খারাপ ছেলের পাল্লায় পড়িনি, যে আমাকে নিয়ে খেলা করবে ।সত্যিই তুমি আমাকে নিয়ে খেলনি, কিন্তু আমার মনটাকে নিয়ে খেলেছ। তোমার জন্য আমি আমার অনেক চোখের জল ফেলেছি, অনেক রাতের ঘুম নষ্ট করেছি। কিন্তু আমি জানি এর কোন মূল্য নেই ,এসব শুধু এই অবাধ্য মনটার জন্য। যাই হোক, আমি আজও তোমার কাছে কোন দাবি করব না, জোর করব না। শুধু নীরবে চলে যাব। তোমার আমার শেষ দেখা হয়ে গেছে, আর কোনদিন দেখা হবে কিনা জানিনা, দেখা হলে হয়ত কথাই বলবে না। এই ক’দিনে আমি তোমার কত কাছে চলে এসেছিলাম, আর তোমার কয়েকটা কথাতে অনেক অনেক দূরের হয়ে গেছি। এখন থেকে আর তোমাকে বিরক্ত করব না, তোমাকে দেখার জন্য ,কথা বলার জন্য হাঁ করে বসেও থাকব না ।থাকবে হয়ত অন্য কেউ, সে তোমার পছন্দের হবে নিশ্চয়ই। সবাই বলে স্মৃতি সততই সুখের, কিন্তু আমার এই স্মৃতি আমাকে কোন সময় সুখ দেবে না, বরং দুঃখই দেবে। আজকে অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছি, তারপর দেখছি মনটা একটু হালকা হয়েছে। জানো, এই ভাবেই আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে, কি বল? আমাকে যেমন থেকে মন থেকে মুছে ফেলেছ, তেমনই এই কথাগুলোকেও মুছে ফেলো, চিঠিটাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে দিও। ইতি বন্যা