ছোটবেলার কথা মনে পড়ে ।মায়ের সঙ্গে স্কুল থেকে ফেরার কথা ,সেই সরকারপাড়ার ঢালু রাস্তা, সেইসব পুকুর ,পুকুরে বাবার সঙ্গে সাঁতার শেখাও মনে পড়ে। পুরোনো পাড়া, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর মনে পড়ে । মামা বাড়িটা তো আজ আর নেই, শুধু মনে পড়ে মামা বাড়ির বড় ঘরটায় খাটে শুয়ে শুয়ে আধো অন্ধকারে জেগে ঘুমিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেতুম ,পাতলা কাচের পদ্মফুল ল্যাম্পশেডের থেকে বিচ্ছুরিত নীল ছায়ালোক বেরিয়ে এসে, কত স্বপ্ন সৃষ্টি করছে। শুধু মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে লরি যাবার শব্দে স্বপ্ন ভেঙে যেত। বিকেল হলেই একছুটে ছাদে বা নিচের উঠোনে। কত বড় বাড়ি ,কত ঘর, কত শরিক। বড় রহস্যে ঘেরা ছিল দিনগুলো ,বড় প্রাণময় ছিল ।নানা ঘটনা মনে পড়ে একবার মল্লিকা মাসির হাত ধরে স্কুল থেকে ফেরার সময় কেন জানি না খুব বায়না করেছিলুম, বুড়ির মাথার পাকা চুল কিনে দিতে হবে ।মল্লিকা মাসির কাছে তো আর বেশি পয়সা থাকত না, সেই বা কি করবে! বাধ্য হয়ে বেচারা আঁচলের খুঁট থেকে গুনে গুনে জমানো কয়েনগুলো বের করে সেই বুড়ির মাথার পাকা চুল আমাকে কিনে দিল। আমিও লাফাতে লাফাতে মাসির হাত ধরে বাড়ি ফিরে এলুম। সেই মাসি ছিল বড় বিশ্বাসের ,বড় আপনার।
আর একবার দেখেছিলাম সরলাবুড়ির কয়লার ঝুড়ি বইতে খুব কষ্ট হচ্ছে ,ভারে একেবারে বেঁকে গেছে শরীরটা।আমার দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল। এগিয়ে গিয়ে সেই ঝুড়ি নিজে বয়ে দিয়েছিলাম। বুড়ি খুশি হয়ে বলেছিল “বাবা, তুমি রাজা হও।“ খুব বেশি হয়ত উপকার করে যেতে পারিনি, সেই কয়লা বিক্রি হয়ে তার সেদিন ভাত জুটবে কিনা, তারও খোঁজ নিইনি ,তবুও ওই যে তার এক গাল ফোকলা হাসি আর আশীর্বাদ পেয়ে, ভালোবাসাটা বুঝতে পেরেছিলাম।
পাড়ার দুর্গাপুজোর কথা মনে পড়ে। পুজোর শেষ দিকে আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে একটা মন খারাপও মিশে থাকত। বিস্ময়ে দেখতুম পুজোকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না ।হাতের মুঠো আলগা হয়ে যাচ্ছে, পুজো শেষ হয়ে যাচ্ছে।আর সত্যিই শেষ হয়ে গেল। সপ্তমী ,অষ্টমী, নবমী ,দশমীও।শেষ বেলায় ভাসান, শেষটুকু আনন্দ।তারপর ? আমাদের খালি প্যান্ডেল ,খালি বেদি ,প্যান্ডেল থেকে ডেকোরেটরের লোকেরা কাপড় খুলতে শুরু করেছে, ইলেকট্রিশিয়ানরা লাইট খুলে নিচ্ছে, এসব দেখে সহ্য করতে পারতুম না ।পুজো শেষ ।সেই বোধ হয় প্রথম দুঃখের অনুভূতি ।কিন্তু শৈশবে সেই যে ষষ্ঠীর ভোরে মামাবাড়ির তক্তাপোষে শুয়ে হঠাৎ ঢাকের বাজনা শুনে ঘুম ভেঙে যাওয়া আর প্রচন্ডতম বাস্তবকে মনে পড়ে যাওয়া - আজ থেকে পুজো ।আমার আর সেই পুজো নেই, অফিসে ছুটি নেই, বন্ধুদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই, গোলাপি চুড়িদারের সেই মাতন আর নেই, সেই দিন চলে গেছে। ।শুধু পুজো এসে গেছে ,সেই আনন্দটুকু আজও একই রকম আছে ,দুর্গাপুজো রয়ে গেছে।
স্কুল লাইফের কথা মনে পড়ে, ক্লাস ফাইভে পড়া পর্যন্ত ,স্কুলে পশুপতিদা ছিলেন ছাত্রদের খুব প্রিয় ।তিনি ছিলেন সবার শুধু শিক্ষক নন, বাবাও বটে। এতটাই আপনজন ছিলেন, আমরা তাকে 'তুমি' করে বলতাম। সস্নেহে গালে দাড়ি ঘষে দিতেন তিনি। কোলে করে আদর পর্যন্ত করতেন। ছোটবেলার সেই স্মৃতি এখনও আমার চোখে ভেসে ওঠে। তাকে দেখে তথাকথিত শিক্ষকের ছবি মুছে যেত আমাদের মন থেকে , সেখানে ভেসে উঠতেন পরমাত্মীয়, ভালোবাসার আধার পশুপতিদা।সেই স্যারই একদিন সাংসারিক কলহে বিপর্যস্ত হয়ে, আত্মহত্যা করলেন ।স্কুলে তার মৃতদেহ এনে রাখা হল। আমার শুধু মনে আছে সেই সেদিনের শোকমিছিলের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে গেট অবধি চলে এসেছি, দারোয়ান বাচ্চাদের বের হতে দেবে না ,আর আমার বন্ধু সুশোভন বলে উঠেছে "হ্যাঁ রে ,স্যারকে কি ওরা পুড়িয়ে দেবে?" সেই কথাটুকুর মধ্যে যে ব্যাথা ছিল, যে বেদনাভরা আকুতি ছিল ,তা আর কখনো দেখিনি।সে ভালবাসা ছিল একেবারে নিখাদ। ছোটবেলার কথা মনে পড়লেই মনটা খুব চঞ্চল হয়ে ওঠে।
আর একবার দেখেছিলাম সরলাবুড়ির কয়লার ঝুড়ি বইতে খুব কষ্ট হচ্ছে ,ভারে একেবারে বেঁকে গেছে শরীরটা।আমার দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল। এগিয়ে গিয়ে সেই ঝুড়ি নিজে বয়ে দিয়েছিলাম। বুড়ি খুশি হয়ে বলেছিল “বাবা, তুমি রাজা হও।“ খুব বেশি হয়ত উপকার করে যেতে পারিনি, সেই কয়লা বিক্রি হয়ে তার সেদিন ভাত জুটবে কিনা, তারও খোঁজ নিইনি ,তবুও ওই যে তার এক গাল ফোকলা হাসি আর আশীর্বাদ পেয়ে, ভালোবাসাটা বুঝতে পেরেছিলাম।
পাড়ার দুর্গাপুজোর কথা মনে পড়ে। পুজোর শেষ দিকে আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে একটা মন খারাপও মিশে থাকত। বিস্ময়ে দেখতুম পুজোকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না ।হাতের মুঠো আলগা হয়ে যাচ্ছে, পুজো শেষ হয়ে যাচ্ছে।আর সত্যিই শেষ হয়ে গেল। সপ্তমী ,অষ্টমী, নবমী ,দশমীও।শেষ বেলায় ভাসান, শেষটুকু আনন্দ।তারপর ? আমাদের খালি প্যান্ডেল ,খালি বেদি ,প্যান্ডেল থেকে ডেকোরেটরের লোকেরা কাপড় খুলতে শুরু করেছে, ইলেকট্রিশিয়ানরা লাইট খুলে নিচ্ছে, এসব দেখে সহ্য করতে পারতুম না ।পুজো শেষ ।সেই বোধ হয় প্রথম দুঃখের অনুভূতি ।কিন্তু শৈশবে সেই যে ষষ্ঠীর ভোরে মামাবাড়ির তক্তাপোষে শুয়ে হঠাৎ ঢাকের বাজনা শুনে ঘুম ভেঙে যাওয়া আর প্রচন্ডতম বাস্তবকে মনে পড়ে যাওয়া - আজ থেকে পুজো ।আমার আর সেই পুজো নেই, অফিসে ছুটি নেই, বন্ধুদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই, গোলাপি চুড়িদারের সেই মাতন আর নেই, সেই দিন চলে গেছে। ।শুধু পুজো এসে গেছে ,সেই আনন্দটুকু আজও একই রকম আছে ,দুর্গাপুজো রয়ে গেছে।
স্কুল লাইফের কথা মনে পড়ে, ক্লাস ফাইভে পড়া পর্যন্ত ,স্কুলে পশুপতিদা ছিলেন ছাত্রদের খুব প্রিয় ।তিনি ছিলেন সবার শুধু শিক্ষক নন, বাবাও বটে। এতটাই আপনজন ছিলেন, আমরা তাকে 'তুমি' করে বলতাম। সস্নেহে গালে দাড়ি ঘষে দিতেন তিনি। কোলে করে আদর পর্যন্ত করতেন। ছোটবেলার সেই স্মৃতি এখনও আমার চোখে ভেসে ওঠে। তাকে দেখে তথাকথিত শিক্ষকের ছবি মুছে যেত আমাদের মন থেকে , সেখানে ভেসে উঠতেন পরমাত্মীয়, ভালোবাসার আধার পশুপতিদা।সেই স্যারই একদিন সাংসারিক কলহে বিপর্যস্ত হয়ে, আত্মহত্যা করলেন ।স্কুলে তার মৃতদেহ এনে রাখা হল। আমার শুধু মনে আছে সেই সেদিনের শোকমিছিলের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে গেট অবধি চলে এসেছি, দারোয়ান বাচ্চাদের বের হতে দেবে না ,আর আমার বন্ধু সুশোভন বলে উঠেছে "হ্যাঁ রে ,স্যারকে কি ওরা পুড়িয়ে দেবে?" সেই কথাটুকুর মধ্যে যে ব্যাথা ছিল, যে বেদনাভরা আকুতি ছিল ,তা আর কখনো দেখিনি।সে ভালবাসা ছিল একেবারে নিখাদ। ছোটবেলার কথা মনে পড়লেই মনটা খুব চঞ্চল হয়ে ওঠে।
No comments:
Post a Comment