অনেক দূর চলে এসেছি। সব পুরোনো দিনগুলোকে ছেড়ে, সব মায়ার বাঁধন কাটিয়ে, নিতান্ত স্বার্থপরের মত আজকের এই সুবিধাবাদী পৃথিবীতে চলে এসেছি। পিছনে পড়ে রয়েছে এঁদোগলি ,নর্দমা, নোনাধরা দেয়াল ,চেনা বন্ধু, পিছুডাক, কিছু মানুষ আর প্রিয় আটের দশকের কলকাতা শহর। সেসবই আমার পিছু নেয়। তবু তো চলে যেতেই হয়, সূর্যাস্তের অনেক আগেই ফুরিয়ে যাবার মত।
আমার এই ছেড়ে আসা, বড় হওয়া আর আজকের প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে যাওয়া এ যেন হবারই ছিল। শুধু যখন আকুল বৃষ্টির পরে, সন্ধ্যার আকাশের বুক চিরে এক ঝাঁক পাখি ঘরে ফিরে যায়, মনে হয় আমারও কোথাও যাবার ছিল, যাওয়া হয়নি,কারো কোন কথা রাখার ছিল,রাখা হয়নি। নিতান্তই কেজো একটা কারণে ভুলে থেকেছি নিজেতে। অথচ কেউ হয়তো এখনো বসে আছে আমার পথ চেয়ে ,হয়তো ভাবছে আমি ঠিক যাবো ।একদিন যেতে পারব কিনা জানিনা, সেই জন্যই না থেমে তাকিয়ে আছি সামনের দিকে।
সেই পুরনো লজেন্স বা নকুলদানার দোকান ,সেই সাইকেল সারাইয়ের গুমটি, সেই পাড়ার চেনা রক, চেনা মাঠ- পুকুর, কিছুই আজ আর নেই। অনেক খুঁজেও খুঁজে পাই না কোথাও। সেই ছোট্টবেলার 'আমি'টার সাথে তারা সবাই হারিয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে হেঁকে গেছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, চলে গেছে গলির মোড় ঘুরে চোখের আড়ালে। আমার যাওয়া হয়নি সেই ডাকে সাড়া দিয়ে।আমি ঘরে বসে বসে স্রেফ ফুরিয়ে গেছি ।আর কখনো ফিরে যাওয়া যাবে না সেখানে ।এই সাধারন, প্রয়োজনের বাঁচায়, চোখে জমেছে আজ কুয়াশার মতো ঝাপসা শূন্যতা।
কোথাও পৌঁছতে পারিনি, পৌঁছানো যায় না ।সব স্মৃতি টেনে ধরে মন, টেনে ধরে চলমান পা, যেতে দেয় না। মায়ার বাঁধনে আটকা পড়তেই হয়। টালাব্রিজে জ্যাম লেগে যায়, বাসের ভিড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত, ট্রামের টুংটাং শব্দ, চেনা শহুরে গন্ধ ,পুরোনো সুটকেস খুলে বেরিয়ে পড়ে সেই জামাটা, পুরনো অ্যালবামের পাতায় হঠাৎ ভীষণ চেনা ছবি, মানুষগুলোকে মনে পড়ে যাওয়া-- এইসব নিয়েই আটকে আছি আজকের আমি ।এইগুলোই আমার জীবন, আমার কবিতা। এইসব হারিয়ে পাওয়া এক একটা মুহূর্তই তো আসল বাঁচা। পেরিয়ে চলে গেছে শেষ ট্রেন ,পড়ে রয়েছি শুধু আমি- একা- নিঃশেষিত নীল। মাঝে পেরিয়ে গেছে চল্লিশটা বছর।
আজ আর লোডশেডিং হয় না, অন্ধকারে চাঁদের আলো মেখে আমরা সেই তিন বন্ধুর পরম প্রিয় সময় গুলো আজ আর নেই। হ্যারিকেনের আলোয় পড়তে বসা ,লম্ফর আলোয় দেখা মার মুখ, অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসে বাবার সেই ডাক, সেসব চঞ্চল মুহূর্তগুলো স্মৃতির পাতায় আজও আটকে আছে ।হিসেবের খাতা আজও মেলেনি, মিলিয়েই বা কি হবে? অনুভূতিগুলোই তো বাস্তবে আর নেই ,জাস্ট নেই।
রাস্তারা সব শেষ হয়ে গেছে, ঠান্ডা হাওয়া আর আগের মত দেয় না ,মিঠে বৃষ্টির ছাঁট ভালোবেসে আর জানলা ঠেলে ঢুকে আসে না ,মেঘে মুখ লুকিয়েছে চেনা সূর্য , ফেটে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ অচেনা বুদবুদ ।বেলফুলের মালার পাগল করা গন্ধ বা মামাবাড়ির সেই টগর গাছে সন্ধ্যার অন্ধকারে জোনাকিদের ভীড়, পাগলের মত কত খুঁজেছি, পাইনি ।জানলার ফাঁক দিয়ে আলতো আলোর ক্যালাইডোস্কোপের নকশা কবে হারিয়ে গেছে চিরকালের জন্য, ধ্বংসাবশেষও ধুয়ে মুছে সাফ ।
শুধু বুকের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে একটা ঝরনা, তীব্র বেগে সবকিছু কাঁপিয়ে আছড়ে পড়তে চাইছে ,যেখানে কোন শেষ নেই, সেই কুয়াশায় চলে যেতে চাইছে। জেগে আছে একটা পাগল মন, এখনো খুঁজে চলা একটা 'আমি'র আর একটা 'আমি' কে, আর একটা জীবনকে। যারা রাস্তা হারিয়েছে নাম না লেখা চিঠির মতো -এ গলি, ও গলি হয়ে সময়ের রাজপথে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
হঠাৎ আসা আবেগ, না বোঝা অনুভূতি, না জানা গল্প আর না বলা কথা নিয়ে ,আলাদা একটা না ছোঁয়া পৃথিবী আছে। সেখানেও পৌঁছতে হয়, তার কথা বুঝতে হয় ।অথচ আমার রোজনামচার জীবনে হঠাৎ ঝুপ্ করে সন্ধ্যা নেমে আসে আর এইমাত্র পাশে চলা চেনা মানুষটা হুট্ করে পথচলতি মানুষের ভিড়ে হঠাৎ হারিয়ে যায়, আমি দেখেও কিছু করতে পারিনি। এই সব হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেও একটা অন্যরকম বাঁচা আছে, তার বর্ণমালা আমি শিখতে পারিনি ।আবছায়া পুরোনো পাড়া, বেঁকে যাওয়া চেনা রাস্তার না চেনা দোকানপাট আজও আমাকে দেখতে চায় ,কথা বলতে চায় ।সেই রাস্তা তাই আজও থমকে আছে। অনেক দূর চলে গিয়েও আমাকে তাই আবার ফিরে আসতে হয় এখানে।
যেখানে নিজেকেই নিজে ভালো করে দেখতে পাই না, সেখানেই আসলে নিজেকে সত্যিকারের চেনা যায়। নিজেকে কুড়িয়ে বাড়িয়ে নতুন করে গড়া যায়। অথচ দেখি ওড়ার ইচ্ছেগুলো ,শুরু করার ইচ্ছেগুলো বাজারে সস্তায় বিক্রি হয়,তাও কেউ কেনে না, ছুঁয়েও দেখেনা। চলনসই একটা জীবন খাড়া করে, সমস্ত যন্ত্রণায় ইচ্ছেগুলোকে মাড়িয়ে আমি চলে এসেছি স্বপ্নের মেঘলা সিঁড়ি থেকে বহু দূরে ,আর এই বয়সে ফিরে তাকিয়েও আর সেই মেঘপিয়নকে খুঁজে পেলাম না।
আমার এই ছেড়ে আসা, বড় হওয়া আর আজকের প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে যাওয়া এ যেন হবারই ছিল। শুধু যখন আকুল বৃষ্টির পরে, সন্ধ্যার আকাশের বুক চিরে এক ঝাঁক পাখি ঘরে ফিরে যায়, মনে হয় আমারও কোথাও যাবার ছিল, যাওয়া হয়নি,কারো কোন কথা রাখার ছিল,রাখা হয়নি। নিতান্তই কেজো একটা কারণে ভুলে থেকেছি নিজেতে। অথচ কেউ হয়তো এখনো বসে আছে আমার পথ চেয়ে ,হয়তো ভাবছে আমি ঠিক যাবো ।একদিন যেতে পারব কিনা জানিনা, সেই জন্যই না থেমে তাকিয়ে আছি সামনের দিকে।
সেই পুরনো লজেন্স বা নকুলদানার দোকান ,সেই সাইকেল সারাইয়ের গুমটি, সেই পাড়ার চেনা রক, চেনা মাঠ- পুকুর, কিছুই আজ আর নেই। অনেক খুঁজেও খুঁজে পাই না কোথাও। সেই ছোট্টবেলার 'আমি'টার সাথে তারা সবাই হারিয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে হেঁকে গেছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, চলে গেছে গলির মোড় ঘুরে চোখের আড়ালে। আমার যাওয়া হয়নি সেই ডাকে সাড়া দিয়ে।আমি ঘরে বসে বসে স্রেফ ফুরিয়ে গেছি ।আর কখনো ফিরে যাওয়া যাবে না সেখানে ।এই সাধারন, প্রয়োজনের বাঁচায়, চোখে জমেছে আজ কুয়াশার মতো ঝাপসা শূন্যতা।
কোথাও পৌঁছতে পারিনি, পৌঁছানো যায় না ।সব স্মৃতি টেনে ধরে মন, টেনে ধরে চলমান পা, যেতে দেয় না। মায়ার বাঁধনে আটকা পড়তেই হয়। টালাব্রিজে জ্যাম লেগে যায়, বাসের ভিড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত, ট্রামের টুংটাং শব্দ, চেনা শহুরে গন্ধ ,পুরোনো সুটকেস খুলে বেরিয়ে পড়ে সেই জামাটা, পুরনো অ্যালবামের পাতায় হঠাৎ ভীষণ চেনা ছবি, মানুষগুলোকে মনে পড়ে যাওয়া-- এইসব নিয়েই আটকে আছি আজকের আমি ।এইগুলোই আমার জীবন, আমার কবিতা। এইসব হারিয়ে পাওয়া এক একটা মুহূর্তই তো আসল বাঁচা। পেরিয়ে চলে গেছে শেষ ট্রেন ,পড়ে রয়েছি শুধু আমি- একা- নিঃশেষিত নীল। মাঝে পেরিয়ে গেছে চল্লিশটা বছর।
আজ আর লোডশেডিং হয় না, অন্ধকারে চাঁদের আলো মেখে আমরা সেই তিন বন্ধুর পরম প্রিয় সময় গুলো আজ আর নেই। হ্যারিকেনের আলোয় পড়তে বসা ,লম্ফর আলোয় দেখা মার মুখ, অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসে বাবার সেই ডাক, সেসব চঞ্চল মুহূর্তগুলো স্মৃতির পাতায় আজও আটকে আছে ।হিসেবের খাতা আজও মেলেনি, মিলিয়েই বা কি হবে? অনুভূতিগুলোই তো বাস্তবে আর নেই ,জাস্ট নেই।
রাস্তারা সব শেষ হয়ে গেছে, ঠান্ডা হাওয়া আর আগের মত দেয় না ,মিঠে বৃষ্টির ছাঁট ভালোবেসে আর জানলা ঠেলে ঢুকে আসে না ,মেঘে মুখ লুকিয়েছে চেনা সূর্য , ফেটে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ অচেনা বুদবুদ ।বেলফুলের মালার পাগল করা গন্ধ বা মামাবাড়ির সেই টগর গাছে সন্ধ্যার অন্ধকারে জোনাকিদের ভীড়, পাগলের মত কত খুঁজেছি, পাইনি ।জানলার ফাঁক দিয়ে আলতো আলোর ক্যালাইডোস্কোপের নকশা কবে হারিয়ে গেছে চিরকালের জন্য, ধ্বংসাবশেষও ধুয়ে মুছে সাফ ।
শুধু বুকের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে একটা ঝরনা, তীব্র বেগে সবকিছু কাঁপিয়ে আছড়ে পড়তে চাইছে ,যেখানে কোন শেষ নেই, সেই কুয়াশায় চলে যেতে চাইছে। জেগে আছে একটা পাগল মন, এখনো খুঁজে চলা একটা 'আমি'র আর একটা 'আমি' কে, আর একটা জীবনকে। যারা রাস্তা হারিয়েছে নাম না লেখা চিঠির মতো -এ গলি, ও গলি হয়ে সময়ের রাজপথে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
হঠাৎ আসা আবেগ, না বোঝা অনুভূতি, না জানা গল্প আর না বলা কথা নিয়ে ,আলাদা একটা না ছোঁয়া পৃথিবী আছে। সেখানেও পৌঁছতে হয়, তার কথা বুঝতে হয় ।অথচ আমার রোজনামচার জীবনে হঠাৎ ঝুপ্ করে সন্ধ্যা নেমে আসে আর এইমাত্র পাশে চলা চেনা মানুষটা হুট্ করে পথচলতি মানুষের ভিড়ে হঠাৎ হারিয়ে যায়, আমি দেখেও কিছু করতে পারিনি। এই সব হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেও একটা অন্যরকম বাঁচা আছে, তার বর্ণমালা আমি শিখতে পারিনি ।আবছায়া পুরোনো পাড়া, বেঁকে যাওয়া চেনা রাস্তার না চেনা দোকানপাট আজও আমাকে দেখতে চায় ,কথা বলতে চায় ।সেই রাস্তা তাই আজও থমকে আছে। অনেক দূর চলে গিয়েও আমাকে তাই আবার ফিরে আসতে হয় এখানে।
যেখানে নিজেকেই নিজে ভালো করে দেখতে পাই না, সেখানেই আসলে নিজেকে সত্যিকারের চেনা যায়। নিজেকে কুড়িয়ে বাড়িয়ে নতুন করে গড়া যায়। অথচ দেখি ওড়ার ইচ্ছেগুলো ,শুরু করার ইচ্ছেগুলো বাজারে সস্তায় বিক্রি হয়,তাও কেউ কেনে না, ছুঁয়েও দেখেনা। চলনসই একটা জীবন খাড়া করে, সমস্ত যন্ত্রণায় ইচ্ছেগুলোকে মাড়িয়ে আমি চলে এসেছি স্বপ্নের মেঘলা সিঁড়ি থেকে বহু দূরে ,আর এই বয়সে ফিরে তাকিয়েও আর সেই মেঘপিয়নকে খুঁজে পেলাম না।
অনেকগুলো সত্যি,
ReplyDeleteপিছনে ফিরে তাকালে
স্মৃতির ঝাপসা দেয়ালে আঁকিবুকির জলছবি,
দেখা যায় কিন্তু পড়া যায় না,
যদিবা পড়া যায় বোঝা যায় না,
যদি বা বোঝা যায়,
পড়ে থাকে নিরুপায় প্রতিবিম্ব শুধু।
#প্রলয়
খুব সুন্দর অনুভূতি
ReplyDelete