24 August 2018

ধনধান্য পুষ্পভরা

স্কুলে যখন পড়তাম মনে আছে এক একদিন প্রার্থনায় এক একটা গান গাওয়া হত। ছাত্ররা করিডোরে বা খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে সেই সব গান গাইতাম। শিক্ষকরাও গলা মেলাতেন আর আমাদের দেখভাল করতেন।
 তো মনে আছে  একদিন আমরা সবাই গাইছি দ্বিজেন্দ্রলালের 'ধনধান্য পুষ্প ভরা'।হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন গানের শিক্ষক অমলদা। অসাধারণ এই গানটা অন্য সব প্রার্থনাসঙ্গীতের চেয়ে  আমাকে বেশী আকৃষ্ট করত আর গাইতেও খুব ভাল লাগত। দেশাত্মবোধ মাথাচাড়া দিত গানের কথা আর সুরের জন্য ।বুকের ভেতর কেমন একটা চিনচিনে অনুভূতি হত,ভীষন উদ্বুদ্ধ লাগত,ভীষন মন কেমন করত ,হৃদয় দিয়ে গানটাকে বোঝার চেষ্টা করতাম ।
যাই হোক সেদিন  ধনধান্য গান গাওয়া হয়ে গেছে ,সব ছাত্ররা স্যারেদের তত্ত্বাবধানে যার যার ক্লাসে ফিরে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম রাগী এবং রাশভারী সন্তোষদা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, গানের রেশটা তখনও বোধহয় তার সারা শরীরে ভর করে আছে। তার আগের দিনই ভারত জিতেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট, কপিল দেবের নেতৃত্বে। আমরাও সবাই রাতে বাজি ফাটিয়েছি, মশাল দৌড় দেখেছি ,সে এক দারুণ আনন্দ উন্মাদনা ।স্যারের সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে দেখি দীর্ঘকায় কঠিন রাগী সন্তোষদার দুচোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে আসছে, আর উনি হাত দিয়ে তা মুছে নিচ্ছেন। সন্তোষদা কাঁদছেন।
 তখন বুঝিনি ।এখন এই বয়সে যখন 'ধনধান্য পুষ্পভরা' শুনি আর সেই ছোট বেলার মত বুকের মধ্যে চিনচিন করে ওঠে দেশাত্মবোধ আর তার সঙ্গে আসে এক ভীষণ উপলব্ধি, যেটা তখন আসত না, দেশপ্রেমের সেই পাগল করা বোধে আজ আমারও  চোখ জলে ভরে যায় ।তখন সেই দিনের সেই কান্নার মানে আমি বুঝতে পারি।
 সেইসব সোনালী দিন চলে গেছে, আর আসবেও না জানি ।শুধু মাঝে মাঝে আজকাল যেন আরো বেশি করে সেইসব টুকরো টুকরো স্মৃতি ফিরে আসে। তখনই মনটা ভারি ভালো হয়ে যায়। সেইটুকুই এই জীবনের পাওয়া ,এই যা।

1 comment: